পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/২১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ २०१ ইহাদের মধ্যে বহু পুরাতন ইষ্টক ও প্রস্তরখণ্ড ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত রহিয়াছে। এখানকার কতকগুলি প্রস্তরের কারুকাৰ্য্য দেখিয়া মনে হয় যে সেগুলি বৌদ্ধ যুগের। হিন্দু ভাস্কৰ্য্য সমন্বিত কতকগুলি ভগ্ন প্রস্তর স্তম্ভ ও মসজিদের ধ্বংসাবশেষও এখানে দেখিতে পাওয়া যায়। সবাদ, এই প্রাচীন শহরে বারটি বাজার ছিল বলিয়া ইহার বারবাজার নাম হয় ৷ মতান্তরে এখানে বারজন ফকিরের আস্তানা থাকায় ইহার নাম হয় বারবাজার। এখানে রাজপথের দুই পার্শ্বে রাজমাতা দীঘি, সওদাগর দীঘি, পীরপুকুর, মীরের পুকুর, চেরাগদানি দীঘি, মনোহর পুকুর, কানাই দীঘি, বিশ্বাসের দীঘি, শ্রীরামরাজার দীঘি প্রভৃতি বহু দীঘি ও পুষ্করিণী আছে। জনশ্রুতি যে এই নগরে ১২৬টি দীঘি ছিল। স্ত্রীরামরাজার দীঘির নিকট শ্রীরামরাজার বাড়ীর গড়খাই প্রভূতি এখনও দেখিতে পাওয়া যায়। এই অংশের নাম ছাপাইনগর। এই স্ত্রীরামরাজার ঐতিহাসিক বিবরণ জানা যায় নাই। “কালুগাজী চাম্পাবতী" নামক পুথিতে বর্ণিত আছে যে অলৌকিক শক্তি-সম্পন্ন মহাবীর গাজী ( “ঝিকরগাছা ঘাট” দ্রষ্টব্য ) ছাপাইনগরের শ্রীরামরাজার বাটতে উপস্থিত হইয়া স্বীয় অদ্ভূত ক্ষমতার প্রভাবে তাহাকে পরাজিত ও মুসলমান ধৰ্ম্মে দীক্ষিত করেন। অনেকে অনুমান করেন পুথিতে বর্ণিত ছাপাইনগর ও শ্রীরামরাজার সহিত এই ছাপাইনগর ও শ্রীরামরাজার ঐতিহাসিক সম্বন্ধ আছে। সপ্তগ্রাম বিজয়ী জাফরখানের পুত্র বরখান গাজী কর্তৃক ছাপাইনগর বিজয়ের কাহিনীই হয়ত রূপান্তরিত হইয়া গাথা-সাহিত্যে স্থান লাভ করিয়াছে। বারবাজারের ধ্বংসাবশেষ ও পুকুরগুলির বিভিন্ন আকৃতি হইতে অনুমিত হয় যে এখানে পৰ্য্যায়ক্রমে বৌদ্ধ, হিন্দু ও মুসলমান প্রাধান্ত প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল। কেহ কেহ অনুমান করেন যে চৈনিক পরিব্রাজক যুয়ান চোয়াং, ইতসিং প্রভৃতি বর্ণিত সমতট রাজ্যের রাজধানী এই স্থানে ছিল। য়ুয়ান চোয়াংএর বিবরণ অনুসারে ইহা তাম্র-লিপ্তি হইতে ৯০০ লী পূর্বে। কানিংহাম সাহেবের মতে সমতটের রাজধানী ছিল বৰ্ত্তমান যশোহরের নিকটস্থ মুড়লী কসবায়। - ঝিনাইদহ—যশোহর হইতে ঝিনাইদহ পৰ্য্যন্ত নিয়মিত মোটরবাস যাতায়াত করে। যশোহর হইতে ঝিনাইদহ ২৮ মাইল দূর। প্রধান লাইনের চুয়াডাঙ্গ স্টেশন হইতে ইহা ১৩ মাইল দূর। শহরটি নবগঙ্গা নদীর উপর অবস্থিত। ইহা যশোহর জেলার অন্যতম মহকুমা। পূর্বে এই মহকুমায় বহু নীলের চাষ হইত। ইহার নানাস্থানে পুরাতন নীলকুঠি দেখিতে পাওয়া যায়। ঝিনাইদহের চারিপাশ্বে পূৰ্ব্বে ডাকাতের অত্যন্ত উপদ্রব ছিল। গ্রাম হইতে প্রায় দুই মাইল দূরে একটি বড় পুষ্করিণীর ধারে বহু লোকে ডাকাতের হাতে অত্যাচারিত হইয়াছে বলিয়া কথিত। এখনও পুষ্করিণীটি চক্ষুকোরা নামে অভিহিত । ঝিনাইদহের পূর্বদিকে ৭ মাইল দূরে অবস্থিত বিজয়পুরে মুকুটরায় নামক জনৈক ব্রাহ্মণ রাজার রাজধানী ছিল। কথিত আছে যে তিনি অত্যন্ত প্রতাপশালী ছিলেন । তাহার বহু সৈন্য সামন্তের মধ্যে ১৬ হলকা হাতী, ২০ হলকা ঘোড়া ও ২২০০ কোড়াদার ছিল । তিনি বহু জলাশয় খনন করান, উহাদের মধ্যে ঝিনাইদহের নিকটবৰ্ত্তা ঢোলসমুদ্র নামক বৃহৎ দীঘির পরিমাণ প্রায় ৫২ বিঘার উপর। বিজয়পুরের নিকটবর্তী "বড়বাড়ী” নামক স্থানে তাহার বহু গাভী থাকিত। এই জন্য লোকে তাহাকে “বৃন্দাবনের নন্দ” আখ্যা দিয়াছিল।