পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/২২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পুৰ্ব্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ ミ>> বলন। তিনি বলেন যে দয়ারামের আর কষ্ট করিয়া পুরী পৰ্য্যন্ত যাওয়ার আবশ্বক নাই ; তাহার ভক্তিতে প্রীত স্বয়ং জগন্নাথদেব দারুরূপে র্তাহার গৃহে গমন করিবেন ও ং থায় চিরদিন অবস্থান করিয়া তাহার সেবা গ্রহণ করিবেন। তখন গ্রীত হইয়া দয়ারাম স্বগ্রামে প্রত্যাবৰ্ত্তন করিয়া সকলকে এই শুভ সংবাদ জ্ঞাপন করেন। প্রথমে অনেকেই তাহার কথা বিশ্বাস করে নাই ; কিন্তু নির্দিষ্ট দিনে যথন ভৈরব নদের উজান স্রোত বাহিত হইয়া একটি নিম গাছ ভাটপাড়ার ঘাটে লাগিল তখন জনগণের মধ্যে তুমুল হর্ষধ্বনি উত্থিত হইল। দয়ারাম এই নিম গাছ হইতে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূৰ্ত্তি নিৰ্ম্মাণ করাইলেন। এই অলৌকিক কাহিনী প্রচারের সঙ্গে সঙ্গেই অনেকে জগন্নাথদেবের সেবার জন্য অর্থ দান করিতে লাগিলেন। দয়ারামের গৃহে পূর্ব হইতেই রাধা ও কৃষ্ণের পূজা হইত। জগন্নাথদেবের আবির্ভাবের পর নূতন মন্দির নির্মাণ করিয়া বিগ্রহগুলিকে তন্মধ্যে প্রতিষ্ঠা করা হইল। চাচড়ার রাজপরিবার দেবসেবা নির্বাহের জন্য তিন হাজার বিঘা জমি দান করেন। সেই প্রাচীন কাল হইতে আজ পর্য্যন্ত ভাটপাড়ায় মহাসমারোহে জগন্নাথদেবের রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হইয়া আসিতেছে। প্রায় ষাট বৎসর পূর্বে অপর একজন ভক্ত কর্তৃক শ্রীচৈতন্য, নিত্যানন্দ ও অদ্বৈতাচার্য্যের বিগ্রহ প্রতিষ্ঠিত হয়। মন্দিরের বিভিন্ন কক্ষে অবস্থিত এই বিগ্রহগুলির জন্য ভৈরব তীরবর্তী এই পল্লীট এতদঞ্চলে তীর্থ-গৌরব লাভ করিয়াছে। পুরী হইতে আগমন করিয়া জগন্নাথদেব এখানে গুপ্তভাবে অবস্থান করিতেছেন বলিয়া এই গ্রাম সাধারণের নিকট “গুপ্তপুরী ভাটপাড়া” আখ্যা লাভ করিয়াছে। ভাটপাড়ার রথের মেলা যশোহর খুলনায় বিশেষ বিখ্যাত। মেলার সময় তালতলা হাট স্টেশন হইতে ভাটপাড়া পৰ্য্যন্ত মোটর লঞ্চ ও নৌকা যাতায়াত করে। স্নানযাত্র, ঝুলনযাত্রা ও দোল পূর্ণিমার সময়েও এখানে বহু লোকের সমাগম হয়। দৌলতপুর—কলিকাতা হইতে ১.৫ মাইল দূর। স্থানটি ভৈরব নদের তীরে অবস্থিত ও খুলনা জেলার একটি প্রসিদ্ধ গঞ্জ। এখান হইতে প্রতি বৎসর বহু পরিমাণে পাট, কুঁশ, শিমুল কাঠ, নারিকেল, সুপারি, গুড় ও মাছ চালান যায়। গঞ্জটি ক্রমশঃ বিস্তৃতি লাভ করিয়া শহরে পরিণত হইতেছে। খুলনা হইতে যত স্টীমার উত্তরদিকে যায় তাহদের অধিকাংশই দৌলতপুর হইয়া চলে। এই স্থানে নামিয়া স্টীমারযোগে নড়াইল ও মাগুরা যশোহর জেলার এই দুই মহকুমায় যাওয়া যায়। দৌলতপুর একটি বিখ্যাত শিক্ষা-কেন্দ্র। পাঠশালা হইতে আরম্ভ করিয়া প্রথম শ্রেণীর কলেজ পর্য্যন্ত শিক্ষার প্রায় সর্বপ্রকার প্রতিষ্ঠান এখানে বিদ্যমান। দৌলতপুর “হিন্দু একাডেমির ” নাম বাংলার সর্বত্র সুপরিচিত। ভৈরব নদের তীরে উন্মুক্ত প্রাস্তরে বহু স্থান জুড়িয়া কলেজ ও তৎসংলগ্ন ছাত্রাবাসগুলি অবস্থিত। বাংলার আর কোন কলেজের এত অধিক ছাত্রাবাস নাই। কয়েক বৎসর হইল এখানে একটি কৃষি-কলেজ প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। কৃষি-কলেজ ও তৎসংলগ্ন গো-শালা প্রভূতি এখানকার জীব্য বস্তু। দৌলতপুর স্টেশনের অতি নিকটে “ মহেশ্বর পাশা স্কুল অব আর্ট” নামে একটি আর্ট স্কুল ও মহ শীন উচ্চ ইংরেজী বিদ্যালয় অবস্থিত।. ইহা ছাড়া এখানে মক্তব, চতুষ্পাঠী, গুরুট্রেণিং স্কুল, আয়ুৰ্ব্বেদ বিদ্যালয় প্রভৃতিও আছে। দৌলতপুর কলেজের সম্মুখে “ দৌলতপুর কলেজ” নামে একটি রেল স্টেশনও তুষ্টয়াদে ।