পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/২৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ ९ 8S রামানুসারে রাজ্যের নাম হয় চন্দ্রদ্বীপ। কথিত আছে, একদিন রাত্রিকালে নৌকায় দিঢ়াকালীন চন্দ্রশেখরের প্রতি স্বপ্নাদেশ হয় যে নৌকার নিকটস্থ জলমধ্যে স্থিত বিগ্রহ তিনি যেন উঠাইবার ব্যবস্থা করেন। র্তাহার কথামত দনুজমর্দনদেব জলে ডুব দিয়া কাল পাথরের দুইটি মূৰ্ত্তি প্রাপ্ত হন। আজও মাধবপাশায় এই ফুটি সুপ্তি কাতায়ণী ও মদন গোপাল পূজিত হইতেছেন। মাধবপাশা চন্দ্রদ্বীপ রাজগণের শেষ রাজধানী। এই গ্রামে তানেক ভগ্নাবশেষ বিক্ষিপ্ত দেখা যায়। তুর্গাসাগর নামক একটি সুবৃহৎ প্রাচীন দীঘি বৰ্ত্তমান আছে, উঙ্গ রাজা জয়নারায়ণের মাত কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল। বাজারের নিকট কামানতলায় একটি পিতলের কামান পড়িয়া আছে। দনুজমর্দনদেবের বংশের পুরুষশাখা কিছু কাল পরে লুপ্ত হইলে, এই বংশের কন্যাশাখার বস্তু-বংশীয় পরমানন্দ রাজ্যধিকার পান। ইহার প্রপৌত্র রাজা কন্দপনারায়ণ পটুয়াখালী মহকুমার বোফল থানার অন্তর্গত তেতুলিয়া নদীর পশ্চিম কূলে অবস্থিত পুরাতন রাজধানী কচুয়া পরিত্যাগ করিয়া মাধবপাশায় রাজধানী স্থানান্তরিত করেন। কচুয়া পরিত্যাগ করিবার কারণ কেহ বলেন মগের অত্যাচার, আবার কেহ বলেন তেতুলিয়া নদীর ভাঙ্গন। রাজা কন্দপনারায়ণ বার ভূ ইয়াদিগের অন্যতম ছিলেন এবং মাধবপাশায় ১৪১৫ বৎসর সগৌরবে রাজত্ব করিয়াছিলেন । কন্দপনারায়ণ বীর ও সাহসিক ছিলেন। দেশ রক্ষার্থ মগ ও ফিরিঙ্গীদিগের সহিত বহুবার যুদ্ধ করিয়া তাহাদিগকে পরাজিত করিয়াছিলেন । ইহার রাজত্বকালে ভ্রমণকারী র্যালফ ফিছ ১৫৮৬ খৃষ্টাব্দে বাকলায় আগমন করেন। ফিচের বিবরণী হইতে কন্দপনারায়ণের বীরত্বের কথা জানা যায়। তিনি প্রতাপাদিত্যের সমসাময়িক ছিলেন এবং প্রতাপের সহিত র্তাহার বন্ধুত্ব ছিল। কন্দপনারায়ণের মৃত্যুর পর তাহার নাবালক পুত্র রামচন্দ্র রাজা হন। জেসুইট পাদ্রী ফনসেল প্রতাপাদিত্যের রাজধানী যশোহর যাইবার পথে বাক্লায় নয় বংসর বয়স্ক রাজা রামচন্দ্রের সহিত সাক্ষাৎ করিয়াছিলেন ; ফনসেল ইহাকে অমায়িক ও বুদ্ধিমান বলিয়া বর্ণনা করিয়াছেন। রামচন্দ্রের সহিত পিতৃবন্ধু মহারাজ প্রতাপাদিত্যের কন্যা রাজকুমারী বিমলার বিবাহ হইয়াছিল। কথিত আছে, প্রতাপাদিত্য ও রামচন্দ্রের মধ্যে বিবাহরাত্রে মনোমালিন্ত ঘটায় রাজপুত্র বিবাহের পর অনেক দিন পিত্রালয়ে অবস্থান করেন । বহুকাল পরে প্রতাপাদিত্যের অনুমতি লইয়া বিমলা অনেকগুলি নৌকায় পিত্তালয়ের বহুবিধ উপহার লইয়া স্বামীর রাজধানীর দিকে যাত্রা করিলেন । মাধবণ পাশার নিকট আসিয়া তিনি নৌকা বাধিলেন, আশা করিয়াছিলেন সংবাদ পাইয়া রাজা রামচন্দ্র তাসিয়া তাহাকে লইয়া যাইবেন । কিন্তু রামচন্দ্র অসিলেন না, এদিকে রাণীকে দেখিবার জন্য রাজ্যের নানা স্থান হইতে প্রজার দল তথায় আসিতে লাগিল । দরিদ্র ও ভিক্ষুকগণ বিমলার নিকট বহু অর্থ পাইল, ক্রমে সে স্থানে সপ্তাহে দুই দিন করিয়া হাট বসিতে লাগিল এবং ইহা "বৌঠাকুরাণীর হাট” নামে পরিচিত হইল। এইরূপ বহুদিন নৌকায় অবস্থানের পর রামচন্দ্র তাঁসিয়া পত্নীকে প্রাসাদে লইয়া গেলেন। এই কাহিনীকে আংশিক ভাবে ভিত্তি করিয়া রবীন্দ্রনাথের প্রসিদ্ধ উপন্যাস ‘’বৌঠাকুরাণীর ইটি” রচিত । রামচন্দ্র ও বিমলা কীৰ্ত্তিনারায়ণ ও বামুদেব নামে তুইটি সাহসী ও বীর পুত্ৰ সন্তান লাভ করেন। রামচন্দ্রের মৃত্যুর পর কীৰ্ত্তিনারায়ণ রাজ হইয়াছিলেন, 16 .