পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/২৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

९{{ ० বাংলায় ভ্রমণ কৃষ্ণনগর রাজবাটীতে রক্ষিত আছে। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র গুণগ্রাহী ও বিদ্যোৎসাহী ছিলেন। তিনি নিজে সংস্কৃত শাস্ত্র, সঙ্গীত ও অস্ত্রচালনা বিদ্যা সযত্নে শিক্ষা করিয়াছিলেন। র্তাহার রাজসভায় বহু গুণী ও জ্ঞানী ব্যক্তির সমাগম হইত। বাণেশ্বর বিদ্যালঙ্কার, রামরুদ্র বিদ্যানিধি, গোপাল ভাড় প্রভৃতি র্তাহার সঙ্গে সঙ্গে ফিরিতেন। তাহারই আশ্রয়ে থাকিয়া মহাকবি ভারতচন্দ্র “অন্নদামঙ্গল ও বিদ্যাসুন্দর” রচনা করেন। উদ্ভটকবি রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাতুড়ীর নামও উল্লেখযোগ্য । কথিত আছে, মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র চৌরাশী পরগণা ও চারি সমাজের অধিপতি ছিলেন । র্তাহার অধস্তন বংশধরগণের সময়ে এই বিস্তীর্ণ অধিকার ক্রমশঃ হ্রাস প্রাপ্ত হইয়া সাধারণ জমিদারীতে পরিণত হয়। নদীয়া রাজবংশের বহু কীৰ্ত্তিকলাপ আজিও বিদ্যমান আছে । মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র, শিবচন্দ্র ও শ্ৰীশচন্দ্র কয়েকটি সাধন সঙ্গীতের রচয়িত । বৰ্ত্তমানে কৃষ্ণনগরে দ্রষ্টব্য বস্তুর মধ্যে নদীয় রাজপ্রাসাদ, রাজবংশের ঠাকুর বাড়ী ও কৃষ্ণনগর কলেজ নামক প্রথম শ্রেণীর সরকারী কলেজের নাম উল্লেখযোগ্য। রাজবাটীর সম্মুখস্থ বিস্তৃত প্রাঙ্গনে প্রতি বৎসর চৈত্র মাসে মহাসমারোহে “বার দোল” পৰ্ব্ব অনুষ্ঠিত হয় এবং এই উপলক্ষে নদীয়ার বিভিন্ন স্থান হইতে দ্বাদশটি শ্রীকৃষ্ণ বিগ্রহকে আনিয়া একসঙ্গে দোলায় বসানো হয়। মৃৎশিল্পের জন্ত কৃষ্ণনগরের খ্যাতি জগৎ বিখ্যাত । শহরের অন্তঃপাতী গোয়াড়ি ও ঘুর্ণ নামক স্থানে বহু কুম্ভকারের বাস। নানা প্রকার দেব প্রতিমা, জীবজন্তু, ফল, পুষ্প, মডেল ও তৈজসপত্রাদি নিৰ্ম্মাণে ইহাদের কৃতিত্ব অতি অদ্ভুত। শিল্পচাতুর্য ও বর্ণকৌশল এমন সুন্দর যে জিনিষগুলি দেখিলে স্বাভাবিক বলিয়া ভ্রম হয়। পৃথিবীর প্রায় সকল সভ্যদেশের মনীষিগণ কর্তৃক ইহাদের শিল্পনৈপুণ্য বিশেষভাবে সমাদৃত হইয়াছে। শিল্প চর্চার এই বিশেষ বিভাগে ইহারা বাংলার গৌরব আজিও সমভাবে রক্ষা করিয়া আসিতেছেন। ঘুর্ণ মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের প্রসিদ্ধ সভাসদ বিদূষক গোপাল ভাড়ের জন্মস্থান বলিয়া কথিত। । “ক্ষিতীশ বংশাবলী চরিতম্” নামক সংস্কৃত ভাষায় লিখিত নদীয় রাজবংশের বিবরণীর সম্পাদক দেওয়ান কাৰ্ত্তিকেয় চন্দ্র রায় ও তদীয় সুযোগ্য পুত্র বিখ্যাত কবি-নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (সাধারণের নিকট ডি, এল, রায় নামে সমধিক পরিচিত) কৃষ্ণনগরের অধিবাসী ছিলেন । দ্বিজেন্দ্রলাল রচিত স্বদেশী সঙ্গীত ও হাসির গান এখনও লোকের মুখে মুখে ফিরে । প্রতি বৎসর শ্রাবণ মাসে জন্মতিথি উপলক্ষে কৃষ্ণনগরে কবির জন্মভিটায় সাহিত্যিকগণ সমবেত হন। এদেশের আদালতে প্রথম বাঙালী ব্যারিষ্টার স্থবিখ্যাত মনোমোহন ঘোষ ও র্তাহার কনিষ্ঠ ভ্রাতা, ব্যারিষ্টার ও অসাধারণ বাগ্মী লালমোহন ঘোষ কৃষ্ণনগরের অধিবাসী ছিলেন। ইহাদের পূৰ্ব্ব নিবাস বিক্রমপুরে হইলেও ইহাদের পিতার আমল হইতে ইহার কৃষ্ণনগরেই স্থায়ীভাবে বসবাস করিয়াছিলেন। মনোমোহন ঘোষ তাহার সময়ের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যবহারাজীব ছিলেন। লালমোহন মাইকেল মধুসূদন দত্তের “মেঘনাদ বধ” কাব্য ইংরেজীতে মুন্দর অনুবাদ করিয়াছিলেন। “বাঙ্গালা ব্যকরণ” প্রণেতা লোহারাম শিরোরভু কৃষ্ণনগরের অধিবাসী ছিলেন ; তাহার ভাগিনেয় সুপণ্ডিত ও ঔপন্যাসিক দামোদর মুখোপাধ্যায়ও কৃষ্ণনগরে জন্মগ্রহণ করেন ও প্রতিপালিত হন। “রাজস্থানের পুরাবৃত্ত", “জয়াবতীর উপাখ্যান” প্রভৃতি গ্রন্থ প্রণেতা