পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/২৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৬৪ বাংলায় ভ্রমণ বহরমপুর মুর্শিদাবাদ জেলার সদর মহকুমা । এখানকার কৃষ্ণনাথ কলেজ স্বৰ্গীয়া মহারাণী স্বর্ণময়ীর পুণ্যস্মৃতি বিজড়িত। ইংরেজ সরকার ১৮৬৯ খৃষ্টাব্দে বিলাতের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কলেজের অনুকরণে এই বৃহৎ ও সুন্দর কলেজ ভবনটি নিৰ্ম্মিত করাইয়া ছিলেন। এরূপ সুদৃশ্য কলেজ বাংলা দেশে অল্পই আছে; ভাগীরথীকূলে অবস্থিত এই সুরম্য কলেজ ভবন ও ইহার ঘড়িঘর বহরমপুরের একটি বিশেষ দ্রষ্টব্য। ১৮৮৭ খৃষ্টাব্দে সরকার কলেজটির ব্যয়বহনে অসমর্থ হইলে মহারাণী স্বর্ণময়ী উহার ভার গ্রহণ করিয়া কলেজটিকে রক্ষা করেন। প্রাতঃস্মরণীয় পরলোকগত মহারাজা স্তর মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দী বাহাতুরের সাহায্যে এই কলেজের সর্বাঙ্গীন শ্ৰীবৃদ্ধি হয়। বাংলার নানাস্থানের বহু ছাত্র এখানে শিক্ষা লাভ করেন । র্তাহীদের থাকিবার জন্য অনেকগুলি ছাত্রাবাস আছে । রেশম শিল্পের উন্নতির জন্য সরকার প্রতিষ্ঠিত একটি সেরিকালচারাল ফাম এখানে আছে । বর্তমান বহরমপুর জেলখানা পূৰ্ব্বে সেনা নিবাসের হাসপাতাল ছিল। বহরমপুরের ইংরেজ শাসনের প্রথম আমলের অনেক চিহ্ন দেখিতে পাওয়া যায়। গোরাবাজার হইতে তিন মাইল পূর্বদিকে মাদাপুরে পুরাতন জেলখানা এবং বহরমপুর কোর্ট স্টেশনের উত্তরে বাবুলবনায় একটি পুরাতন খৃষ্টান গোরস্থান আছে ; এখানে অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রসিদ্ধ ইংরেজ সেনা নায়ক জর্জ টমাসের সমাধি আছে; টমাস নৌবিভাগের কৰ্ম্ম ছাড়িয়া বেগম সমরু প্রভৃতির অধীনে সেনানায়কের কার্য্য করিয়া প্রভূত ক্ষমতাশালী হইয়া উঠিয়াছিলেন। মালদহের গোয়ালমাটি নীলকুঠির ক্রাইটন সাহেবও এখানে শায়িত ; ইনি গৌড়ের ধ্বংস স্তৃপ লইয়া বহু অনুসন্ধান ও আবিষ্কার করেন। প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক ও পুরাতত্ত্ববিদ ডক্টর রামদাস সেন বহরমপুরের অধিবাসী ছিলেন ; বহরমপুরের স্ববিখ্যাত গ্রন্থাগার র্তাহার অতুলনীয় কীৰ্ত্তি। তৎপ্রণীত “ঐতিহাসিক রহস্য” “ভারত রহস্য” “রত্ব রহস্য” “বুদ্ধদেব চরিত” প্রভৃতি গ্রন্থ সুধীসমাজে বিশেষ সমাদৃত। বহরমপুর কলেজের নিকটে এই মনীষীর প্রস্তর মূৰ্ত্তি প্রতিষ্ঠিত আছে। স্বনামখ্যাত রাষ্ট্রনৈতিক নেতা বৈকুণ্ঠনাথ সেন, “উস্তান্ত প্রেম’ প্রণেতা চন্দ্রশেখর মুখোপাধ্যায়, টডের “রাজস্থানের" বঙ্গানুবাদক যজ্ঞেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিখ্যাত ঐতিহাসিক নিখিলনাথ রায়ের নামও বহরমপুর প্রসঙ্গে স্মরণীয়। নিখিলনাথ রায়ের ঐতিহাসিক চিত্র “মুর্শিদাবাদ কাহিনী” বাংলা ভাষার একটি মূল্যবান তথ্যপূর্ণ গ্রন্থ। এই বহরমপুরেই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের পৌরোহিত্যে বাংলা সাহিত্য সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন বাংলা তারিখ সন ১৩১৫ সালের ১৭ই ও ১৮ই কাৰ্ত্তিক অনুষ্ঠিত হয়। বহরমপুর হইতে এক মাইল দক্ষিণে চালতিয়া-মালতিয়া গ্রামে প্রতিবৎসর ৯ই চৈত্র হইতে আরম্ভ করিয়া রামের পূজা উপলক্ষে প্রায় এক মাস ব্যাপী একটি মেলা বসে। বহরমপুর হইতে ৬ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে ভাগীরথীর অপর পারে রাঙ্গামাটির ধ্বংসাবশেষ দেখিয়া আসা যায়। পূৰ্ব্ব ভারত রেলপথের ব্যাগুেল-বারহাড়োয় শাখার “চিরতী” স্টেশন দ্রষ্টব্য।