পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/২৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৭০ বাংলায় ভ্রমণ নিকটবৰ্ত্তী একটি ক্ষুদ্র মন্দিরে জৈন যতিগণের চরণ চিহ্ন দেখিতে পাওয়া যায়। মন্দিরের পূৰ্ব্ব দিকে উদ্যান মধ্যে একটি পুরাতন পুকুর আছে। উহার নাম মধুগড়ে। কথিত আছে বৰ্গীর হাঙ্গামার সময়ে কাশীমবাজার নিবাসী জৈন মহাজনগণ নিজেদের ধনরত্ন বিশেষভাবে চিহ্ণিত করিয়া এই পুকুরের মধ্যে নিক্ষেপ করিয়াছিলেন। পরে উহার সমুদয়ের উদ্ধার সাধন আর হয় নাই, উহা নাকি “ যখের ধনে” পরিণত হইয়া গিয়াছিল। কাশীমবাজারের ব্যাসপুর নামক স্থানে একটি সুন্দর মন্দির মধ্যে এক প্রকাণ্ড শিবলিঙ্গ বিরাজিত আছেন। প্রসিদ্ধ পণ্ডিত কৃষ্ণনাথ ন্যায়পঞ্চাননের পিতা রামকেশব শৰ্ম্ম উনবিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। ইহার প্রাচীরের ইষ্টকে বহু দেবদেবীর মূৰ্ত্তি উৎকীর্ণ অাছে। ইহা এ অঞ্চলের একটি দ্রষ্টব্য বস্তু । কাশীমবাজার রাজবংশের নাম বাংলাদেশে সুপরিচিত। কান্তবাবু বা কৃষ্ণকান্ত নন্দী এই রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। কাশীমবাজারে কাস্তবাবুর একটি রেশমের দোকান ছিল। তিনি বাল্যকালে বাংলা, ফার্স ও সামান্য ইংরেজী শিখিয়াছিলেন। কথিত আছে, যে ওয়ারেন হেষ্টিংস সিরাজউদ্দৌলা কর্তৃক মুর্শিদাবাদে বন্দী অবস্থায় থাকিবার সময় কোন ক্রমে পলাইয়া আসিয়া কাশীমবাজারে আশ্রয়ের সন্ধান করিতে থাকেন। নবাব সৈন্সের ভয়ে কেহই তাহাকে আশ্রয় দিতে চাহে না, তখন কান্তবাবু নিজ বিপদ উপেক্ষা করিয়া র্তাহাকে নিজের দোকানে আশ্রয় দেন। নবাব সৈন্যগণ র্তাহাকে খুজিয়া না পাইয়া চলিয়া গেলে কাস্তবাবু র্তাহার পলায়নের আয়োজন করিয়া দেন। কথিত আছে, গোপনতার জন্য কান্তবাবু ওয়ারেন হেসটিংসের উপযোগী খাদ্য দ্রব্যের আয়োজন করিতে পারেন নাই এবং পান্তাভাত ও চিংড়ি মাছ দিয়াই অতিথি সৎকার করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন । উত্তরকালে হেষ্টিংস যখন ভাগ্য পরিবর্তনের ফলে ভারতের ভাগ্য বিধাতা হইলেন, তখন পূর্বকৃত উপকারের কথা স্মরণ করিয়া তিনি কান্তবাবুকে উচ্চ রাজকাৰ্য্যে নিযুক্ত করেন এবং নিজে সহায় হইয়া তাহাকে বহু ভূসম্পত্তি প্রদান করেন। ওয়ারেন হেষ্টিংস যখন চেৎসিংহের প্রাসাদ আক্রমণ করেন সে সময়ে কান্তবাবু তাহার সঙ্গে ছিলেন। কথিত আছে, তিনি সৈন্ত্যগণের অত্যাচার হইতে মহিলাদিগকে রক্ষা করিবার বিশেষ চেষ্টা পাইয়াছিলেন। এই কারণে তিনি কাশীরাজমাতার নিকট হইতে বহু মূলা নানারূপ অলঙ্কার পাইয়াছিলেন ; ইহা ব্যতীত রাজ প্রাসাদ হইতে লক্ষ্মীনারায়ণ শিলা, একমুখ রুদ্রাক্ষ, দক্ষিণাবৰ্ত্ত শঙ্খ, রামচন্দ্রী মোহর প্রভৃতি পাইয়াছিলেন। এ সমস্তই রেসিডেন্সী সমাধির অনতিদূরে কাশীমবাজার রাজ বাড়ীতে এখনও দেখিতে পাওয়া যায়। পরাজিত চেৎসিংহের প্রাসাদ হইতে কাস্তবাবু একটি পাথরের দালান উঠাইয়া আনিয়া কাশীমবাজারে নিজ বাটতে স্থাপন করেন। কাশীমবাজার রাজ বাটতে উহা এখনও দৃষ্ট হয়। কাশীমবাজার রাজবংশের রাজা কৃষ্ণনাথের পত্নী দানশীল মহারাণী স্বর্ণময়ী ও অশেষ গুণমণ্ডিত দানবীর মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দীর নাম বাংলাদেশে প্রাতঃস্মরণীয় হইয়া রহিয়াছে। কাশীমবাজারের পার্থেই, বহরমপুর হইতে প্রায় ৪ মাইল উত্তর-পূর্বে চুণাখালি একটি পুরাতন স্থান। এখানে মসনদ আউলিয়া নামক এক ফকিরের সমাধি আছে। খৃষ্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীতে চুণাখালি প্রভূত উন্নতি লাভ করে এবং এই স্থান একটি বাণিজ্য