পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/২৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ ২৭১ কেন্দ্র হইয় উঠে। পূর্বে চুণাখালি একপ্রকার কাগজের জন্য বিখ্যাত ছিল। চুণাখালি হইতে মুর্শিদাবাদ পৰ্য্যন্ত যে রাস্তা গিয়াছে উহার দক্ষিণ পার্শ্বে একটি মনোরম দেওদার বীথি নিশাত বাগ পৰ্য্যন্ত গিয়াছে। চুণাখালি এখন আমের জন্য প্রসিদ্ধ। এ অঞ্চলে নানা জাতীয় আম জন্মিয় থাকে যথা কাহিতুর, রাণীপদম, শাদৌল্লা, বোম্বাই, চিমনি, নাক্কি প্রভৃতি । মুর্শিদাবাদ-কলিকাতা হইতে ১২২ মাইল দূর। শহরটি স্টেশন হইতে প্রায় ২ মাইল পশ্চিমে ভাগীরথীর পূর্বকুলে অবস্থিত। ইহা স্বাধীন বাংলার শেষ রাজধানী । মুর্শিদাবাদের পুরাতন নাম মুখসুদাবাদ বা মুখমুসাবাদ । এই নামের উৎপত্তি সম্বন্ধে কয়েকটি প্রবাদ প্রচলিত অাছে। কেহ কেহ বলেন, পূর্বে এখানে মুখসুদনদাস ( মধুসূদনদাস) নামে এক প্রসিদ্ধ বৈষ্ণবের আখড়া ছিল ; তিনি প্রভূত অর্থ সঞ্চয় করিয়াছিলেন এবং সেই অর্থসাহায্যে এই নগর নিৰ্ম্মিত হয় বলিয়া ইহার নাম হয় মুখস্থদাবাদ । অন্যমতে মুখসুদন দাস একজন নানকপন্থী সন্ন্যাসী ছিলেন ; তিনি গেড়েশ্বর হুসেন শাহের অমুখ সারাইয়া দিলে দরবার হইতে এই স্থানে বহু ভূসম্পত্তি প্রাপ্ত হন, এবং ক্রমে ইহ নগরে পরিণত হয়। অপর একটি জনপ্রবাদ অনুসারে মখ মুস্ আলি খা নামে একজন ধনী ব্যবসায়ী আধুনিক মুর্শিদাবাদের দক্ষিণে কাশীমবাজারের পাশ্বস্থ চুণাখালিতে বাস করিতেন এবং তাহার নাম হইতেই চূণাখালির উত্তরাংশের নাম হয় মখমুসাবাদ বা মুখস্থসাবাদ । আইন-ই-আকবরীতে মুর্শিদাবাদের নাম নাই। “ আকবরনামা” গ্রন্থে বাংলার এককালের শাসন কৰ্ত্ত সৈয়দখার ভ্রাতা মুখস্থস্ খা নাকে এক ব্যক্তির নাম দৃষ্ট হয়। কেহ কেহ অনুমান করেন এই মুখস্থসখাই যখন ফৌজদার বা নায়েব দেওয়ানরূপে চুণাখালিতে ছিলেন, তখনই উহার উত্তরাংশ মুখমুসাবাদ নাম প্রাপ্ত হয়। আজিও এঅঞ্চলের প্রাচীন লোকেরা মুর্শিদাবাদকে মুখমুদাবাদ বলেন। ১৭৬০ খৃষ্টাব্দ পর্য্যন্ত সমস্ত ইংরেজী কাগজপত্রে ও আমি, হলওয়েল প্রভৃতি প্রথম ইংরেজ লেখকগণের বিবরণীতে মুখস্থদাবাদ নামই আছে। মুখস্থদাবাদের প্রাচীন ইতিহাস বিশেষ কিছু জানা যায় না। আওরঙ্গজেব বাদশাহের রাজ্যকালে ১৬৬৬ খৃস্টাব্দে টাভার্নিয়ার এই স্থানে আসিয়াছিলেন এবং ইহাকে একটি প্রধান স্থান বলিয়া বর্ণনা করিয়াছেন ; তিনি ইহার নাম নির্দেশ করিয়াছেন “ মদেসুবাজারকী ” (Madesoubazarki)। লাহোর চিত্রশালায় রক্ষিত ১৬৭৯ খৃষ্টাব্দে মুদ্রিত আওরঙ্গজেবের একটি টাকা হইতে জানা যায় যে সে সময়ে মখমুসাবাদে মুঘলদের একটি টাকশাল ছিল। ১৬৯৭ খৃষ্টাব্দে শোভা সিং ও রহিম খার বিদ্রোহের সময় মুখস্থদাবাদ লুষ্ঠিত হইয়াছিল। কাশীমবাজারের বণিকগণ বিদ্রোহীদের নেতার সহিত সাক্ষাৎ করিয়া এবং উপঢৌকন দিয়া সন্তুষ্ট করায় তাহাদের শহর লুষ্ঠিত হয় নাই। সম্রাট আওরঙ্গজেবের সময়ে বাংলাদেশের রাজধানী প্রথমে জাহাঙ্গীরনগর বা ঢাকায় ছিল। সে সময়ে আওরঙ্গজেবের পৌত্র আজিম উসশান বাংলার সুবাদার বা নবাব নাজিম ছিলেন এবং মুর্শিদকুলী খাঁ ১৭০১ খৃষ্টাব্দে বাংলার দেওয়ানী পদে নিযুক্ত