পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/২৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२७-8 বাংলায় ভ্রমণ ঝিল এবং তাহার তীরে একটি প্রকাণ্ড ও অতি মনোরম বিলাসভবন ও প্রাসাদ নিৰ্ম্মাণ করিয়াছিলেন । এই স্থান সিরাজের অত্যন্ত প্রিয় ছিল এবং এই প্রাসাদেই মসনদ স্থাপন করিয়া রাজকাৰ্য্য সমাধান করিতেন। সিরাজের উপাধি মনস্তুর-উল-মুলক হইতে স্থানটির নাম মনস্বরগঞ্জ ও প্রাসাদটি মনসুরগঞ্জের প্রাসাদ বা লালকুঠি নামে অভিহিত হয়। গৌড়ের ধ্বংসাবশেষ হইতে প্রস্তরাদি আনাইয়া এই প্রাসাদ নিৰ্ম্মিত হয় এবং ইহাকে সৌন্দৰ্য্যমণ্ডিত করিতে সিরাজ বহু আয়াস পাইয়াছিলেন। প্রাসাদ নিৰ্ম্মিত হইলে বৃদ্ধ নবাব আলিবর্দী প্রভৃতি ইহা দেখিতে আসিয়া সিরাজ উদ্দৌলার মাজ্জিত রুচি ও সৌন্দর্য্যবোধের পরিচয় পাইয়া বিশেষ প্রীত হইয়াছিলেন। পলাশীর যুদ্ধে পরাজিত হইয়া ১৭৫৭ খৃষ্টাব্দের ২৪শে জুন শুক্রবার রাত্রিতে লুৎফউন্নেসার সহিত জন্মের মত সিরাজ র্তাহার এই প্রিয় প্রাসাদ ছাড়িয়া পলায়ন করেন। নবাব হইয়া মীরজাফরও প্রথমে মনসুরগঞ্জের প্রাসাদে অবস্থান করেন ; পরে নিজামত কেল্লায় আলিবন্দীর প্রাসাদে চলিয়া যান। হীরাঝিল ও মনসুরগঞ্জ প্রাসাদের চিহ্নই প্রায় দেখিতে পাওয়া যায় না। ঝিলটি ভাগীরথী গর্ভে বিলীন হইয়াছে। প্রাসাদের অবস্থাও তাহাই ; কেবল তু একটি ভিত ও চত্বর দেখিতে পাওয়া যায়। হীরাঝিলের উত্তরে ভাগীরথীর পশ্চিম কূলে মুরাদবাগে ক্লাইভ, হেষ্টিংস এবং অন্যান্য ইংরেজ রেসিডেন্টগণ বাস করিয়াছিলেন। এই স্থানও প্রায় ভাগীরথীর গর্ভে গিয়াছে । . মুর্শিদাবাদের গৌরব-রবি আজ অস্তমিত। এককালে ভাগীরথীর উভয় কুল ব্যাপিয়া প্রাসাদে অট্টালিকায় ঝলমল করিত। পলাশীযুদ্ধের পর মুর্শিদাবাদ সম্বন্ধে ক্লাইভ লিখিয়াছিলেন যে এই নগরী লণ্ডন নগরীর মতই বিস্তৃত, জনাকীর্ণ ও ধনশালী ; শুধু পার্থক্য এই যে পূর্বোক্ত শহরের অধিবাসিগণের মধ্যে কেহ কেহ লণ্ডনবাসিগণের অপেক্ষ অসীম ধনবান । . মুর্শিদাবাদের কথা শেষ করিবার আগে এখানকার সুপ্রসিদ্ধ ব্যারা বা বের পর্বের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া অবশ্যই প্রয়োজন । প্রতি বৎসর ভাদ্র মাসের শেষ বৃহস্পতিবারের রাত্রিকালে জ্ঞানীশ্রেষ্ঠ খাজা খিজিরের স্মৃতির উদ্দেশ্বে আলোকমালায় বিভূষিত করিয়া বঁাশ ও কলা গাছের শত শত ক্ষুদ্র বৃহৎ তরণী বর্ষাক্ষীত ভাগীরথীতে ভাসাইয়া দেওয়া হয়। প্রধান আলোকযান দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে যথাক্রমে ১২০ ও ৯০ ফুট পৰ্য্যন্ত হইয়া থাকে। মুর্শিদাবাদের গৌরবময় যুগে ইহা আরও অনেক বড় হইত। বহু সংখ্যক কলা গাছ বাধিয়া বঁাশ ও বাখারির সাহায্যে রঙীন কাগজ দিয়া নানারকম ঘর বাড়ী ও যুদ্ধের জাহাজ নিৰ্ম্মাণ করিয়া অসংখ্য প্রদীপ দিয়া এগুলিকে সজ্জিত করা হয়। ইহার চতুদিকে ছোট ছোট বহু যান ও অগণিত কমল (কপূর-পূর্ণ মাটির প্রদীপ) ভাসিতে থাকে। মুর্শিদাবাদের নবাববংশীয়গণ জাকজমকের সহিত শোভাযাত্রা করিয়া জাফরগঞ্জের নিকট নদী তীরে গিয়া এই উৎসবে যোগদান করেন । কতকগুলি সিপাহী ও নিজামতী ব্যাণ্ড খাজা খিজিরের জন্য রুটি, ক্ষীর, পান প্রভৃতি লইয়া প্রধান আলোকযানে আরোহণ করিলে ধীরে ধীরে নদী বক্ষে এই আলোকমালা সঙ্গীত যোগে চলিতে থাকে। নদীবক্ষ ও তীর হইতে নানাবর্ণের সুন্দর সুন্দর আতসবাজী আকাশে উঠিয়া উৎসবের সৌন্দর্য্য বৰ্দ্ধন করে। পূর্বে মুর্শিদাবাদের পশ্চিম তীরে রোশনীবাগে বঁাশ দিয়া ত্রিতল গৃহাদি