পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/৩০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৯ ও বাংলায় ভ্রমণ গোদাগাড়ী--গোদাগাড়ী ঘাটের পরের স্টেশন গোদাগাড়ী কলিকাতা হইতে ১৫৭ মাইল দূর। বর্তমান রেল স্টেশন হইতে পুরাতন গোদাগাড়ী প্রায় দুই মাইল দূরে মহানন্দার তীরে অবস্থিত। গোদাগাড়ী একটি পুরাতন বন্দর। বর্গীর হাঙ্গামার সময় যখন মহারাষ্ট্ৰীয়ের মুর্শিদাবাদের আশ-পাশ ও ভগবানগোলা লুণ্ঠন করিতে আসিত, তখন অনেক সন্ত্রাস্ত হিন্দু ও মুসলমান ধনজন সহ গোদাগাড়ীতে আসিয়া আশ্রয় গ্রহণ করিতেন। একবার বর্গীর ভয়ে স্বয়ং নবাব আলিবর্দী খাঁ ধনরত্ব ও স্ত্রী কন্যাদি স্বীয় জামাতা নওয়াজেশ, মহম্মদ খাঁর তত্ত্বাবধানে গোদাগাড়ীতে পাঠাইয়া দিয়াছিলেন। পুরাতন গোদাগাড়ীতে সেই সময়ের নিৰ্ম্মিত একটি ভগ্নপ্রায় মসজিদ এবং একটি কেল্লার ধ্বংসাবশেষ এখনও বর্তমান আছে। গোদাগাড়ীর সন্নিকটে রাজশাহী জেলার মধ্য দিয়া আসিয়া একটি নদী পদ্মা বা গঙ্গায় পড়িয়াছে। এই ক্ষুদ্র নদীটিও পদ্মা নামে অভিহিত। কেহ কেহ মনে করেন গঙ্গা যখন ভাগীরথীর খাদ ছাড়িয়া ক্রমেই পুৰ্ব্ব দিকে বহিতে করে সেই সময়ে এই ক্ষুদ্র নদীটির খাত দিয়া প্রবাহিত হওয়ায় ইহারই নাম পদ্মা য়াছে । - আমনুর জংশন—কলিকাতা হইতে ১৭১ মাইল দূর। গোদাগাড়ী ছাড়িয়া আমমুরার দিকে কিছু দূর যাইলেই বরেন্দ্র ভূমির বিশিষ্ট দৃশ্ব আরম্ভ হইবে উচু নীচু লাল মাটির বিস্তৃত প্রান্তরে সজাগ প্রহরীর মত দাড়াইয়া অসংখ্য তাল গাছ সত্যই মনোরম মনে হয়। বাংলার সাধারণ দৃশ্ব হইতে ইহার পার্থক্য মুস্পষ্ট। ইহার কিছু সাদৃশ্ব আছে বাংলার পশ্চিম প্রান্তে বীরভূম ও মেদিনীপুরের সীমান্ত ভূমির দৃশ্বের সহিত। আমমুরা পূর্বে একটি ছোট স্টেশন ছিল। কিন্তু প্রধান লাইনের আব্দুলপুর হইতে মালদহ জেলার মহানন্দ তীরবত্তী গঞ্জ চাপাই-নবাবগঞ্জ পর্য্যস্ত বড় মাপের লাইন নিৰ্ম্মিত হওয়ার পর বড় মাপের ও মাঝারি মাপের লাইনের জংশন স্টেশনরূপে আমনুর প্রাধান্ত লাভ করিয়াছে। এই স্টেশনটিকে অবলম্বন করিয়া মুক্ত প্রাস্তরের মধ্যে ধীরে ধীরে একটি ছোট শহর গড়িয়া উঠিতেছে। আমমুরা স্টেশন অতিক্রম করিবার পর গাড়ী কিছুদূর অগ্রসর হইলে লাইনের দুই দিকে মধ্যে মধ্যে উচ্চ জাঙ্গাল দৃষ্ট হয়। এই উচ্চ জাঙ্গালের নামই বরিন্দ বা উচ্চ ভূমি। ইহার নাম হইতেই উত্তর বঙ্গের একাংশের নাম বরেন্দ্র ভূমি হইয়াছে। পূর্বে বরিন্দ অঞ্চলে বহু অরণ্য ছিল। সাওতালের আসিয়া বহু পুরুষ ধরিয়া এই সকল অরণ্যের অধিকাংশকে এখন কৃষিক্ষেত্রে পরিণত করিয়াছে। বরেন্দ্র ভূমির মৃত্তিকার রঙ সাধারণতঃ লাল। বাংলার অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় এই অঞ্চল যে বহু পুরাতন সে কথা “ বাংলার সাধারণ পরিচয়” অধ্যায়ে পূর্বেই উল্লিখিত হইয়াছে। y রোহনপুর—কলিকাতা হইতে ১৮৭ মাইল দূর। ইহা পুনর্ভবা নদীর উপর অবস্থিত। স্টেশনের উত্তরেই ইহার উপর রেলওয়ে সেতু। পুনর্ভবা এক মাইলের কিছু উত্তর পশ্চিম দিকে গিয়া মহানন্দার সহিত মিশিয়াছে। রোহনপুর এ অঞ্চলে ধান ও চাউলের কারবারের একটি প্রধান কেন্দ্র। 19a