পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/৩০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৯৬ বাংলায় ভ্রমণ বিষয়ে ঐতিহাসিকদের যথেষ্ট সন্দেহ আছে। যাহা হউক, অনেকে মনে করেন গৌড়পতি জয়ন্তই পরে আদিশূর নামে খ্যাত হন এবং ব্রাহ্মণ্য ধর্মের পুনরুজ্জীবনের জন্য কান্তকুম্ভ হইতে পাঁচ জন ব্রাহ্মণ আনাইয়া ছিলেন। এই শুরুবংশীয় এগার জন রাজার পর অষ্টম শতাব্দীর শেষভাগে বৌদ্ধ ধৰ্ম্মাবলম্বী প্রসিদ্ধ পালবংশীয় রাজগণের অভু্যুথান হয়। শুরবংশীয় রাজগণের ঐতিহাসিকতা সম্বন্ধে অনেকেই সন্দিহান। বহুকাল ধরিয়া দেশে শক্তিশালী রাজার অভাবে বাহির হইতে বার বার আক্রমণ ও মৎস্যন্যায় বা অরাজকতায় অতিষ্ঠ হইয়া প্রজাগণ মিলিত হইয়া “সর্ববিদ্যাবিং দয়িতবিষ্ণুর পৌত্র ও “খণ্ডিতারাতি” ব্যপটের পুত্র গোপালকে গৌড়ের রাজা নিৰ্ব্বাচিত করেন। ইনিই প্রথম গোপালদেব নামে ইতিহাসে প্রসিদ্ধ এবং গৌড়বঙ্গ-মগধের অধীশ্বর হইয়াছিলেন। তিববতীয় ঐতিহাসিক তারানাথ এই সময়কার গৌড়বঙ্গের অবস্থার সম্বন্ধে লিখিয়াছেন যে “প্রতিদিন এক এক জন রাজা নির্বাচিত হইতেন, কিন্তু ভূতপূর্ব রাজার পত্নী রাত্রিতে র্তাহাদিগকে সংহার করিতেন। কিছু দিন পরে গোপালদেব রাজপদ লাভ করিয়া রাজ্ঞীর হস্ত হইতে আত্মরক্ষা করিয়া আমরণ সিংহাসন লাভ করিয়াছিলেন।” গৌড়ের নিকটবৰ্ত্তী খালিমপুর গ্রামে প্রথম গোপালদেবের পুত্র ধৰ্ম্মপালদেবের একখানি তাম্রশাসন আবিষ্কৃত হয়, তাহা হইতেও প্রথম গোপালদেবের নির্বাচনের কথা জানা যায়। ঐতিহাসিকেরা অনুমান করেন প্রথম গোপালদেবের রাজা কাল হইতেই গৌড় নগরের ইতিহাস আরম্ভ হইয়াছে এবং বাংলার পালবংশীয় রাজাদিগের সময়েই গৌড় মহানগরীর প্রতিষ্ঠা ও উন্নতি হয়। গোপালদেব রাজ্য সুরক্ষিত করিয়া ও শাসনের সুব্যবস্থা করিয়া মগধে একটি বিশাল বিহার স্থাপন করেন এবং তাহা হইতেই বৰ্ত্তমান বিহার নগর ও বিহার প্রদেশের নামের উৎপত্তি। গোপালদেবের মৃত্যুর পর তাহার পুত্র ইতিহাস প্রসিদ্ধ ধৰ্ম্মপালদেব সিংহাসনে আরোহণ করেন। ধৰ্ম্মপালের রাজ্য বহু দূর বিস্তৃত ছিল, তিনি কান্তকুজ জয় করিয়া ইন্দ্ররাজের পরিবর্তে চক্রায়ূধকে সিংহাসনে বসাইয়া ছিলেন। র্তাহার খালিমপুরের তাম্রশাসন হইতে জানা যায় যে র্তাহার প্রাধান্য মুদূর সিন্ধু, কান্দাহার, পঞ্জাব ও কাঙ্গড়ার রাজগণ পৰ্য্যন্ত স্বীকার করিয়া ছিলেন। তিনি জামালগঞ্জের নিকট পাহাড়পুরে সোমপুর মহাবিহার ও ভাগলপুরের নিকট বিক্রমশিলা মহাবিহার প্রতিষ্ঠা করেন। ধৰ্ম্মপাল রাষ্ট্রকুট বংশীয় পরবলের কন্যা রাদেবীর পাণিগ্রহণ করেন। প্রায় ৩৫ বৎসর রাজত্ব করিয়া তাহার মৃত্যু হইলে তাহার পুত্র দেবপালদেব সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি পিতৃরাজ্য আরও বিস্তৃত করিয়াছিলেন ও কম্বোজ, কামরূপ, উৎকল, গুর্জর ও রাষ্ট্রকুটরাজদিগকে পরাজিত করিয়াছিলেন। দেবপালদেবের মুঙ্গেরে ও নালন্দায় দুখানি তাম্রশাসন পাওয়া গিয়াছে; উভয় তাম্রশাসনেই দেখিতে পাওয়া যায় যে র্তাহার অপ্রতিদ্বন্দ্বী আধিপত্য হিমালয় হইতে সেতুবন্ধ ও “বরুণ নিকেতন” হইতে "ক্ষীরোদ সমুদ্র” অর্থাৎ পশ্চিম সমুদ্র হইতে পূৰ্ব্ব সমুদ্র পর্য্যন্ত বিস্তৃত ছিল । নালন্দার তাম্রশাসন হইতে জানা যায় যে সুমাত্রা ও যবদ্বীপের রাজা শৈলেন্দ্র বংশীয় শ্ৰীবালপুত্রদেব দেবপালদেবের রাজ্যান্তর্গত বৌদ্ধ তীর্থ নালন্দায় একটি বিহার প্রতিষ্ঠা করাইয়াছিলেন এবং ইহার ব্যয় নির্বাহের জন্য তৎকর্তৃক দেবপালদেব অমুরুদ্ধ হইয়া রাজগৃহ বিষয়ে পাচ খানি গ্রাম দান করিয়াছিলেন । এই তাম্রশাসন