পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/৩১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৯৮ বাংলায় ভ্রমণ “ রামপালের অভিষেক কালে পাল-রাজগণের অধিকার বোধ হয় ভাগীরথী ও পদ্মার মধ্যস্থিত ‘ব’ দ্বীপে সীমাবদ্ধ হইয়াছিল। " বরেন্দ্র ভূমি ও গৌড় সিংহাসন তখন দিব্যকের ভ্রাতুপুত্র ভীমের অধিকারে ছিল। রামপাল পিতৃরাজ্য পুনরধিকার করিবার জন্য সামন্তরাজগণের সাহায্য লইয়া নেী সেতু দ্বারা ভাগীরথী পার হইয়া ভীমকে পরাজিত ও নিহত করিয়া গৌড় অধিকার করেন। রামপাল ওড়িষ্যা, কামরূপ ও মিথিলা জয় করেন। রামপাল রমাবতী নামে একটি নূতন রাজধানী ও জগদ্দল নামে মহাবিহার প্রতিষ্ঠা করেন। রামপালদেবের সান্ধি-বিগ্রহিক প্রজাপতি নন্দীর পুত্র সন্ধ্যাকর নন্দী “রামচরিতম্” গ্রন্থে পালবংশীয়দের বিস্তৃত বিবরণ দিয়াছেন। তিব্বতীয় ঐতিহাসিক তারানাথ লিখিয়াছেন, রামপালদেব ৪৬ বৎসর গৌড়ে রাজত্ব করিয়াছিলেন। রামপালের পর তাহার পুত্র কুমারপালদেব গৌড় সিংহাসনে আরোহণ করেন; তাহার অল্পকাল রাজত্ব মধ্যেই ওড়িষ্যারাজ অনন্তবৰ্মা চোড়গঙ্গ ভাগীরথী তীরবর্তী ভূভাগ অধিকার করেন এবং কর্ণাট দেশীয় চন্দ্রবংশীয় ব্রহ্ম-ক্ষত্রিয় সামন্ত সেনের পৌত্র বিজয়সেন রাঢ় অধিকার করেন। কুমারপালদেবের পর তাহার শিশুপুত্র তৃতীয় গোপালদেব অল্পকালের জন্য রাজা হইয়া সম্ভবতঃ গুপ্ত ঘাতকের হস্তে নিহত হন এবং রামপাল দেবের কনিষ্ঠপুত্র মদনপালদেব গৌড় সিংহাসনে আরোহণ করেন; তাহার রাজ্য মগধ ও উত্তরবঙ্গে সীমাবদ্ধ ছিল। মদনপালদেব র্তাহার অষ্টম রাজ্যাঙ্কে বিজয়সেন কর্তৃক গৌড় হইতে তাড়িত হইয়া মগধে আশ্রয় গ্রহণ করেন। ইনিই সম্ভবতঃ পাল বংশের শেষ রাজা। ইহার পর খৃষ্টীয় দ্বাদশ শতাব্দীতে মগধের পূর্ব ভাগে গোবিন্দপাল নামে এক রাজা ছিলেন ; অনেকে অনুমান করেন ইনি পালবংশীয়। ইনি মহম্মদ-ই-বখতিয়ারের সহিত যুদ্ধ করিয়া সসৈন্তে নিহত হন। এ যুদ্ধে বৌদ্ধ ভিক্ষুগণ দেশ রক্ষার্থ অস্ত্র ধারণ করিয়াছিলেন। বিজেতৃগণ জয়ী হইয়া উদগুপুর সঙ্খারাম ও বিক্রমশিলা মহাবিহারের রাশি রাশি গ্রন্থ ভস্মীভূত করিয়াছিল। প্রায় চারি শতাব্দী ধরিয়া রাজত্ব করিবার পর বৌদ্ধ ধৰ্ম্মাবলম্বী এই বাঙালী রাজবংশ লুপ্ত হইয়া যায়। পাল রাজগণের ইতিহাস বাঙালী জাতি ও বাংলা দেশের ইতিহাস। র্তাহাদের সময়ে জাতীয় জীবনে নানা দিকে উন্নতি দৃষ্ট হয়। বিশেষতঃ ধৰ্ম্মপাল ও দেবপালদেবের রাজত্ব কালে গৌড়-মগধ-বঙ্গে শিল্প সাধনার চরম উৎকর্ষের পরিচয় পাওয়া যায় ; গৌড় ও মগধ তখন ভাস্কর্য্যের জন্য সমগ্র ভারতবর্ষে প্রসিদ্ধি লাভ করে । র্তাহাদের সময়ে দুই জন বিশিষ্ট ভাস্কর ধীমান ও ইটপালের কথা তিব্বতীয় ঐতিহাসিক তারানাথ উল্লেখ করিয়াছেন। পাল যুগের অনুপম মূৰ্ত্তি প্রভূতিগুলি এই শিল্পিদ্বয় এবং র্তাহাদের শিষ্যসম্প্রদায়ের দ্বারা নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল । পাল রাজগণের রাজধানী প্রাচীন গৌড়ের চিহ্নমাত্র নাই। বর্তমান গৌড়ের ধ্বংসাবশেষের কয়েক মাইল উত্তরে কালিন্দী নদীর নিকটে এই রাজধানী অবস্থিত ছিল বলির অনুমিত হয়। সম্ভবতঃ র্তাহাদের প্রাসাদাদির উপকরণ লইয়া পরবর্তী সেন ও পাঠান রাজগণের রাজধানী নিৰ্ম্মিত হয়। র্তাহাদের কীৰ্ত্তিগুলি এখনও গৌড়ের ভগ্ন প্রাসাদ ও মসজিদের অঙ্গে দেখিতে পাওয়া যায়।