পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/৩১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ ' هدۀ কর্ণাটদেশীয় সেনবংশজ বিজয় সেনের গৌড় বিজয়ের কথা উল্লেখ করা হইয়াছে। রাজশাহী জেলার দেবপাড়া গ্রামে প্রাপ্ত শিলালিপি প্রশস্তি হইতে জানা যায় যে বিজয় সেন গৌড়েশ্বরকে পরাজিত করিয়া কামরূপরাজ ও কলিঙ্গরাজকে পরাজিত করেন। (খেতুর রোড স্টেশন দ্রষ্টব্য।) প্রায় ৩৫ বৎসরকাল রাজত্ব করিবার পর বিজয় সেনের মৃত্যু হইলে তাহার পুত্র বঙ্গদেশে কৌলিন্ত প্রথার প্রবর্তৃক বল্লাল সেন খৃষ্টীয় দ্বাদশ শতাব্দীর প্রথমভাগে গৌড় সিংহাসনে আরোহণ করেন। বল্লাল সেন কৃত ' দান সাগর" ও “অদ্ভূত সাগর” নামক স্মৃতি ও জ্যোতিষ বিষয়ক গ্রন্থে র্তাহার পাণ্ডিত্যের প্রমাণ পাওয়া যায়। বল্লাল সেনের মৃত্যুর পর তাহার পুত্র লক্ষ্মণসেন ১১১৩ খৃষ্টাব্দে গৌড় সিংহাসনে আরোহণ করেন। চালুক্য বংশসস্তৃতা তাহার মাতার নাম রামদেবী। লক্ষ্মণ, সেনদেবের পাঁচখানি তাম্রশাসন আবিষ্কৃত হইয়াছে। র্তাহার পুত্র কেশব সেন ও বিশ্বরূপ সেনের তাম্রশাসনদ্বয় হইতে জানা যায় যে লক্ষ্মণসেন বারাণসী, প্রয়াগ, কলিঙ্গ ও কামরূপ জয় করিয়াছিলেন। লক্ষ্মণসেনের রাজত্বের শেষদিকে মগধের কতকাংশ তাহার রাজ্যভুক্ত হয়। ইহার সময়ে সেনবংশ উন্নতির চরমশীর্ষে উন্নীত হয়। ধোয়ী, জয়দেব প্রভৃতি কবিগণ র্তাহার সভাসদ ছিলেন। রামপাল দেবের রাজত্বকাল হইতে গৌড়ীয় ভাস্করশিল্পের পুনরুমতি আরম্ভ হইয়াছিল। লক্ষ্মণসেনের সময়ে গৌড়ীয় শিল্প উন্নতির অতি উচ্চ সোপানে আরোহণ করিয়াছিল। এই যুগের নিদর্শনগুলি প্রথম পাল সাম্রাজ্যের শিল্প নিদর্শনসমূহের সমতুল্য না হইলেও তদপেক্ষ অধিক হীন নহে। লক্ষ্মণসেনদেবের অভিষেকের সময় হইতে লক্ষ্মণ সংবৎ বা লসং নামে একটি নূতন অব্দ গণনা করা হয়। বুদ্ধগয়ার দু'খানি শিলালিপিতে লসং ব্যবহৃত হইয়াছে। এই অব্দ সেন রাজ্যের অন্তর্গত মিথিলায় বহুকাল প্রচলিত ছিল এবং আধুনিক কালেও কখনও কখনও দৃষ্ট হয়। প্রায় ত্রিশ বৎসর রাজত্ব করিয়া তিনি পরলোক গমন করিলে তাহার পুত্রদ্বয় গৌড় সিংহাসনে আরোহণ করিয়াছিলেন। ১১৭০ খৃষ্টাব্দের পর ও ১২০০ খৃষ্টাব্দের পূৰ্ব্বে ইহার রাজত্ব করিয়াছিলেন। সেন রাজগণের রাজত্বকালের সামান্ত চিহ্নষ্ট গৌড়ে এখন দৃষ্ট হয়। আইন-ইআকবরীতে লিখিত আছে বল্লালসেন গৌড়ে একটি দুর্গ নিৰ্ম্মাণ করিয়াছিলেন। সাল্লাপুরে এই প্রাচীন দুর্গের ধ্বংসাবশেষ ও স্ববৃহৎ মৃৎপ্রাকার দেখা যায়; ইহা বল্লালবাড়ী বা বল্লালভিট নামে অভিহিত। বল্লালের প্রতিষ্ঠিত বিশাল বড় সাগরদীঘিও এই স্থানে বর্তমান। এত বড় জলাশয় বাংলাদেশে আর নাই বলিলেই হয়। দৈর্ঘ্যে ইহা ৪৮০০ ফুট প্রস্থে ২৪০০ ফুট। সাগরদীঘির উত্তর-দক্ষিণে এক মাইল দূরে গঙ্গার একটি প্রাচীন ও পরিত্যক্ত খাতে সাতুল্লাপুরের গঙ্গাস্নানের ঘাট অবস্থিত। কথিত আছে, কোন কোন মুসলমান সুলতানের আমলে এই একটি মাত্র ঘাটে হিন্দুরা স্নান আহ্নিকাদি করিতে পারিতেন। পৌষ সংক্রান্তি, ভাদ্র পূর্ণিমা, ভাদ্র সংক্রান্তি ও দশহরায় বহুকাল হইতে এই স্থানে মেলা বসে। লক্ষ্মণসেন রাজা হইয়া রাজধানীর উত্তরস্থ শহরতলীতে তুর্গ ও প্রাসাদদি নিৰ্ম্মাণ করিয়া ঐ স্থানের নাম রাখেন লক্ষ্মণাবতী। মুসলমান ঐতিহাসিকগণ ইয়াকে লখনীেতী বলিতেন। বর্তমান মালদহ বা ইংরেজ বাজারের নিকটে রাজমহল রাস্তার উপর একটি উচ্চভূমি দেখিতে পাওয়া যায়, উক্ত স্থানে লক্ষ্মণসেনের প্রাসাদাদি ছিল।