পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/৩১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ \లిa স্থানান্তরিত করেন। দিল্লীশ্বর মহম্মদ-বিন-তোগলক শাহ তাহার প্রভুত্ব রক্ষা করিতে সমর্থ হন নাই। কথিত আছে এই সময়ে দামনাশের শিখিবাহন বা শিখাই সান্যাল এবং ভাজনীর সুবুদ্ধিরায় ভাছড়ী প্রভৃতি হিন্দুদিগের মধ্য হইতে ৫০ হাজার লোক সংগ্ৰহ করিয়া শমস্-উদ্দীন ইলিয়াস শাহের বিরাট সেনাবাহিনী গঠনে ও অন্যান্য নানা ভাবে সাহায্য করিয়াছিলেন । শমস্-উদ্দীন কৃতজ্ঞতার চিহ্ন স্বরূপ শিখাই সান্যালকে প্রসিদ্ধ চলনবিলের দক্ষিণাংশ ও ভাদুড়ীদিগকে উত্তরাংশের জমিদারী প্রদান করেন। শিখাই সান্যালের গড়বেষ্টিত বাসভবন সান্তলিগড় বা সাতোর নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে। মুবুদ্ধিরাম ভাদুড়ী গৌড়ের সুলতানকে বার্ষিক মাত্র এক টাকা কর দিতেন ; এজন্য ইহার বংশ “একটাকিয়া” ভাতুড়ী নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে । দিল্লীশ্বর মহম্মদ-বিন-তোগলকের পর তৎপুত্র সম্রাট ফিরোজ শাহ তোগলক বাংলাকে দমন করিবার জন্য বিশেষ চেষ্টিত হন। কথিত আছে, গৌড়েশ্বর শম্স্-উদ্দীন ইলিয়াস শাহ নিজ রাজধানীতে সম্রাট শমস্-উদ্দীন আলতমাশ নিৰ্ম্মিত দিল্লীর প্রসিদ্ধ স্নানাগারের অনুকরণে একটি স্নানাগার নির্মাণ করায় সম্রাট ফিরোজ শাহ, তোগলক অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হইয়া বাংলা আক্রমণের উদ্যোগ করেন । ত্রয়োদশ বৎসর ধরিয়া বাংলা স্বাধীনতা ভোগ করিতেছিল, এইবার সম্রাট ফিরোজ শাহ তোগলক স্বয়ং ৭০ হাজার সৈন্য সহ গোঁড়াভিযানে বাহির হন। শমস্-উদ্দীন ইলিয়াস শাহ রাজধানী পাণ্ডুয়া পরিত্যাগ করিয়া পাণ্ডুয়ার ২০ মাইল উত্তরে নদী ও অরণ্যবেষ্টিত একডালার তুর্ভেদ্য দুর্গে অবস্থান করিতে লাগিলেন। ফিরোজ শাহ তোগলক পাণ্ডুয়া বিনা আয়াসেই অধিকার করিলেন, রাজধানীর নিরীহ অধিবাসীদের উপর তিনি কোনও অত্যাচার করেন নাই। নিজ নামানুসারে তিনি পাণ্ডুয়ার ফিরোজাবাদ নামকরণ করেন। একডাল তুর্গ ২১ দিন ধরিয়া অবরোধ করিয়াও সম্রাটপক্ষ ইহা গ্রহণ করিতে পারেন নাই। সম্মুখে বর্ষার ভয়ে সম্রাটপক্ষ অধিক দিন অপেক্ষা করা সুবিধাজনক নহে ভাবিয়া কৌশলে গৌড়ীয়গণকে দুর্গ হইতে বাহির করিবার জন্য অবরোধ উঠাইয়া কিছুদূর হটিয়া গিয়া শিবির স্থাপন করিলেন এবং রটাইয়া দিলেন যে র্তাহারা দিল্লী ফিরিয়া যাইতেছেন। ইসিয়াস শাহ শত্রুপক্ষকে পশ্চাৎ হইতে আক্রমণ করিবার জন্য ১০ হাজার অশ্বারোহী, ২ লক্ষ পদাতিক ও ৫০টি হাতী লইয়া অগ্রসর হইলেন । এই সুযোগে সম্রাটপক্ষীয়গণ দক্ষিণে বামে ও মধ্যে ৩০ হাজার করিয়া অশ্বারোহী ও হস্তিদল রাখিয়া প্রচণ্ডবেগে সহসা ইলিয়াস শাহের পক্ষকে আক্রমণ করিলেন। এই ভীষণ যুদ্ধে সহদেব নামে একজন বাঙালী সেনাপতি গৌড়রাজের পক্ষে বীরত্বের সহিত লড়িয়া এক লক্ষ আশি হাজার বাঙালী সৈন্যসহ নিহত হন। ইহা একডালার যুদ্ধ নামে খ্যাত। ইলিয়াস শাহ শীঘ্রই বুঝিতে পারলেন তিনি প্রতারিত হইয়াছেন এবং রণে ভঙ্গ দিয়া পুনৰ্ব্বার তুর্গমধ্যে আশ্রয় লইলেন । সম্রাট ফিরোজ শাহ তোগলক দ্বিতীয় বার দুর্গ অবরোধ করিলেন, কিন্তু এবারেও কিছুতেই তুর্গ অধিকার করিতে পারিলেন না এবং শেষ অবধি সদলবলে দিল্লী ফিরিয়া যাইতে বাধ্য হইলেন। ইহার পর ১৩৫৭ খৃষ্টাব্দে উভয় পক্ষের মধ্যে সম্মান জনক সন্ধি স্থাপিত ও গৌড় রাজ্যের সীমা নির্দিষ্ট হয় এবং তখন হইতে বাংলার স্বাধীনতা দিল্লীর বাদশাহগণ কর্তৃক প্রকাশু ভাবে স্বীকৃত হয়। অতঃপর শম্স্-উদ্দীন ইলিয়াস শাহ সুবর্ণগ্রাম অধিকার করেন ;