পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/৩১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ (L o L না পাইয়া অসময়ে আজান দিয়া তাহার মনোযোগ আকর্ষণ করে। অসময়ে আজান দিবার কারণ জানিতে চাহিলে হরকরা সুলতানকে কাজীর আদেশ নিবেদন করে। সুলতান গিয়াস-উদ্দীন বস্ত্রের নীচে একটি ছোট তলোয়ার লুকাইয়া আদালতে উপস্থিত হইলেন। কাজী সাহেব বস্ত্র মধ্যে একটি চাবুক লুকাইয়া রাখিয়া মুলতানকে রাজেচিত অভ্যর্থন করিয়া বসাইলেন এবং বিচারে তাহাকে উচিত পরিমাণ অর্থ দিয়া বিধবার ক্ষতিপূরণ করিতে আদেশ দিলেন। সুলতান সানন্দে তাহ পালন করিলেন এবং তলোয়ারটি বাহির করিয়া বলিলেন যে র্তাহার পদমর্য্যাদার ভয়ে কাজী যদি সুবিচার না করিতেন তাহা হইলে কাজীর মস্তক ছেদন করিতেন। কাজীও চাবুক বাহির করিয়া বলিলেন, সুলতান যদি বিচারালয়ের আদেশ না মানিতেন, এই চাবুকের দ্বারা তাহার পৃষ্ঠদেশ দীর্ণ করিতেন । গিয়াস-উদ্দীন আজম শাহ ইরাণের প্রসিদ্ধ কবি হাফেজকে নিজ রাজসভায় নিমন্ত্রণ করিয়া লোক পাঠাইয়াছিলেন ; কবি অবশ্য আসিতে পারেন নাই । কথিত আছে, একবার অত্যন্ত পীড়িত হইলে মৃত্যুর আশঙ্কা করিয়া তিনি সৰ্ব্ব, গুল ও লালা নামে তিন জন অবরোধবাসিনীকে মৃত্যুর পর তাহার শব ধুইবার ভার দিয়াছিলেন, ইহা লইয়া র্তাহাদের সকলে বিদ্রুপ করিলে গিয়াস উদ্দীন একটি কবিতার প্রথমাংশ রচনা করেন ; বাংলা তথা হিন্দুস্থানে কেহ ইহার শেষাংশ রচনা করিতে না পারিলে তিনি সিরাজ নগরে কবি হাফেজের নিকট উহা প্রেরণ করিয়াছিলেন। হাফেজ অবিলম্বে উহা পূরণ করিয়া তাহার সহিত স্থূলতানের নামে একটি গজল লিখিয়া পাঠাইয় দেন । গিয়াস্-উদ্দীন আজম শাহের রাজত্বের শেষদিকে ভাতুড়িয়া পরগণার হিন্দু জমিদার ও গৌড়ের রাজস্ব ও শাসন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কৰ্ম্মচারী রাজা গণেশ বা কংসনারায়ণ বিশেষ ক্ষমতাশালী হইয়া উঠেন। রিয়াজ-উস-সলাতীন অনুসারে তাহার আদেশে বা চক্রান্তে গিয়াস-উদ্দীন এবং র্তাহার পুত্র ও পৌত্র নিহত হইলে গণেশ পাণ্ডুয়া বা ফিরোজাবাদের গৌড় সিংহাসন অধিকার করিয়াছিলেন। কেহ কেহ বলেন গিয়াস উদ্দীনের মৃত্যুর পর অস্তযুদ্ধে গৌড় রাজ্য বিপৰ্য্যস্ত হইলে গণেশ স্বয়ং রাজা হইয়া শাস্তি ও সুশাসন স্থাপন করেন। বারেন্দ্র কুলশাস্ত্র মতে গণেশ ব্রাহ্মণ ছিলেন এবং কায়স্থ কুলপঞ্জিকায় তাহাকে কায়স্থ ও দিনাজপুর রাজবংশের আত্মীয় বলা হইয়াছে। রিয়াজ-উস্-সলাতীন অনুসারে মুসলমানগণের প্রতি রাজা গণেশের অত্যাচারের জন্য পাণ্ডুয়ার প্রসিদ্ধ পীর সেখনুর কুতব-উল-আলম জৌনপুরের সুলতান ইব্রাহিম শাহ, শাকীর সাহায্য প্রার্থনা করেন। ইব্রাহিম শাহ সসৈন্তে গৌড়াভিমুখে অগ্রসর হইলে রাজা গণেশ শেখনূর কুন্তব-উল-আলমের শরণাপন্ন হন এবং নিজ পুত্র যছকে মুসলমান ধৰ্ম্মে দীক্ষিত করিতে স্বীকৃত হইলে শেখনূর কুতব-উল-আলমের কথায় জৌনপুরের মুলতান ফিরিয়া যান। যছ মুসলমান হইয়া জলাল-উদ্দীন নাম গ্রহণ করেন ; রিয়াজ-উস্-সলাতীন অনুসারে গণেশ সুবর্ণধেনু ব্ৰত করিয়া জলাল-উদ্দীনকে পুনরায় হিন্দু করিয়াছিলেন, কিন্তু তিনি গণেশের মৃত্যুর পর পুনরায় মুসলমান হন। রিয়াজ-উস্-সলাতীনে গণেশের কেবল নিন্দাই আছে, সেজন্য ঐতিহাসিকেরা রিয়াজের পক্ষপাতদুষ্ট বিবরণ সৰ্ব্বথা গ্রহণ করেন না । তারিখ-ই-ফেরেশতায় ইব্রাহিম শাহ কর্তৃক গৌড়রাজ্য আক্রমণের কোন উল্লেখই নাই এবং গণেশের বহু প্রশংসা আছে। গণেশ মুসলমানদিগকে বিশেষ সমাদর করিতেন এবং তাহার মৃত্যুর পর রাজধানীর বহু মুসলমান তাহার শব মুসলমানের ন্যায়