পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/৩২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

9 o বাংলায় ভ্রমণ সংক্রান্তির দিন চৈতন্যদেবের আগমনের দিন স্মরণ করিয়া বৈষ্ণবদিগের সুবৃহৎ মেলা বসিয়া থাকে। রূপসাগর দীঘিটি বৃহৎ, কিন্তু কুণ্ডগুলি ক্ষুদ্র । এ সকল জলাশয়েই কুম্ভীর আছে । রূপসাগরের নিকটে দক্ষিণ দিকে বড় সোনা মসজিদ বিশেষ দ্রষ্টব্য স্থান। ইহা বারদুয়ারী নামেও প্রসিদ্ধ। ইহা ১৬৮ ফুট লম্বা ও ৭৫ ফুট চওড়া । বাদশাহদিগের দপ্তরখানারূপেও ইহা ব্যবহৃত হইত। ইহার এখন ধ্বংসাবস্থা, তথাপি গবর্ণমেণ্টের পূৰ্ত্তবিভাগ ইহার যথাসাধ্য রক্ষার ব্যবস্থা করিয়াছেন। মসজিদটি চতুষ্কোণ, প্রস্তর নিৰ্ম্মিত । ইহার একটি প্রকাগু দালান বা হলঘর আছে, তাহাতে তুই সারি স্তম্ভ ছিল, এখন অনেকগুলিরই ভগ্নদশা। পূৰ্ব্বে হলঘরের উপরে ছাদ ও ইষ্টক নিৰ্ম্মিত ৪৪টি গম্বুজ ছিল, খিলানের আকার দেখিয়া তাহা বুঝা যায়। মসজিদের উত্তরাংশে মহিলাদের বসিবার জন্ত উচ্চ মঞ্চ এখনও বর্তমান আছে। এই মসজিদের সম্মুখে উত্তর-দক্ষিণে দীর্ঘ একটি জলাশয় আছে, তাহাতে পদ্মফুল ফুটিয়া থাকে। ঐতিহাসিকরা বলেন, আলাউদ্দীন হুসেন শাহ এই মসজিদের নিৰ্ম্মাণ কাৰ্য্য আরম্ভ করিয়াছিলেন এবং তাহার পুত্র নাসিরুদ্দিন নসরৎশাহের রাজত্বকালে সম্ভবতঃ ১৫২৬ খৃষ্টাব্দে উহা সম্পূর্ণ হইয়াছিল। মসজিদটি নসরৎশাহের সৌন্দৰ্য্য বোধ ও শিল্পামুরাগের সম্যক পরিচায়ক। রাভেনশ ইহাকে গৌড়ের সৰ্ব্বোৎকৃষ্ট হৰ্ম্ম্য বলিয়া বর্ণনা করিয়াছেন ! বড় সোনা মসজিদ বা বারদুয়ারী হইতে দক্ষিণ-পশ্চিমাভিমুখে প্রায় এক মাইল পথ অগ্রসর হইলে মুসলমান রাজাদিগের গৌড় দুর্গের ভগ্নাবশেষ দৃষ্ট হয়। এই দিকে উক্ত দুর্গের উত্তরের দ্বার অবস্থিত। ইহাই ফুর্গের প্রধান প্রবেশ দ্বার ছিল। উহার নাম দাখিল-দরওয়াজ । এই তুর্গ ও প্রাসাদ এক মাইল বিস্তৃত ছিল। এই দুর্গের চতুর্দিকে ৮ ফুট চওড়া ও ৬৬ ফুট উচ্চ প্রস্তরমণ্ডিত ভীম প্রাচীর ছিল। এই প্রাচীর ৬৬ ফুট বা ২২ গজ উচ্চ ছিল বলিয়া এখনও “বাইশগজী” নামে পরিচিত। এখন প্রাচীরের বক্ষ ভেদ করিয়া প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড বৃক্ষ জন্মিয়াছে—প্রাচীর জঙ্গলে পূর্ণ হইয়া গিয়াছে। প্রাচীরের পাদমূলে যে গভীর পরিখা ছিল, উহা শুষ্ক হইয়া গিয়াছে, উহাতে সর্ষপাদির চাষ আবাদ হইতেছে। দাখিল দরওয়াজাটি ৭০ ফুট উচ্চ। উহার মধ্য দিয়া তিনটি বৃহৎকায় হস্তী পর পর পৃষ্ঠে আরোহণ করিয়া অনায়াসে যাতায়াত করিতে পারে। ছোট ছোট লাল ইটে তৈয়ারী দরওয়াজার প্রাচীর গাত্রে নানাবিধ কারুকার্য্য দেখা যায়। দ্বারের দুই পার্শ্বে প্রহরীদের থাকিবার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কক্ষ ছিল। এককালে এই প্রকাণ্ড দরওয়াজার দুই দিকে চারিটি ইষ্টকের মিনার ছিল। উত্তর দিকের দাখিল দরওয়াজ দিয়া দুর্গাভ্যন্তরে প্রবেশ করিলে পর পর কয়টি প্রাচীন ধ্বংস-নিদর্শন দৃষ্টিগোচর হয়, যথা—প্রাচীর ও পরিখাবেষ্টিত ‘হাবেলি খাস' রাজপ্রাসাদ, বাদসাহ কবর, কদম রসুল, চিকা মসজিদ, গুমটি মসজিদ ইত্যাদি।