পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

{\ు বাংলায় জমণ এই মূৰ্ত্তির অধোভাগ অদৃশু, কটাদেশ হইতে মস্তক পৰ্য্যন্ত অঙ্গ বহুবিধ মূল্যবান অলঙ্কারে ভূষিত ও জিহা স্বর্ণমণ্ডিত। কালীঘাটকে লক্ষ্য করিয়া কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত কলিকাতার ' সম্বন্ধে লিখিয়াছেন,— “ এই কলিকাতা কালিকাক্ষেত্র কাহিনী ইহার সবার শ্রুত । বিষ্ণুচক্র ঘুরেছে হেথায়, মহেশের পদলে এ পুত।” কালীঘাটের আদি মন্দির যশোহররাজ প্রতাপাদিত্যের খুল্লতাত রাজা বসন্ত রায় কর্তৃক নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল। বর্তমান মন্দির বড়িশার সাবর্ণ চৌধুরী বংশের সন্তোষ রায় কর্তৃক ১৮০৯ খৃষ্টাব্দে নিৰ্ম্মিত হয়। তৎপরে এই মন্দিরের বহু সংস্কার সাধিত হইয়াছে। প্রবাদ, বহু প্রাচীনকালে আদিগঙ্গার তীরে বর্তমান প্রেসিডেন্সী জেলের দক্ষিণে কালীর হাতি প্রাচীন আদি মন্দির ছিল এবং বগীরা এখানে নরবলি দিত। কালীমন্দিরের সম্মুখস্থ নাটমন্দির প্রায় সব সময়েই চণ্ডীপাঠ প্রভৃতি কাৰ্য্যে নিরত লোকের দ্বারা পরিপূর্ণ থাকে। ইহার দক্ষিণে পশুবলির স্থান । এখানে প্রত্যহ বহু ছাগ বলি হয় । কালীঘাটে নিত্যই লোকের ভিড়, নিত্যই মহোৎসব। তবে শনি ও মঙ্গলবারে, প্রতি অমাবস্যা ও সংক্রান্তিতে, গঙ্গাস্নানের যোগে, কালীপূজার দিন ও মহাষ্টমী উপলক্ষে এখানে সৰ্ব্বাপেক্ষ অধিক জনসমাগম হয়। মন্দিরচত্তরে প্রবেশ কারবার প্রধান ফটকের বামদিকে অপর একটি মন্দিরে রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহ আছে। বাওয়ালীর জমিদার উদয়নারায়ণ মণ্ডল ১৮৪৩ খৃষ্টাব্দে এই মন্দির ও বিগ্রহের প্রতিষ্ঠা করেন। মন্দিরটি পর্ণকুটরের অনুকরণে বিশুদ্ধ বাংলা পদ্ধতিতে নিৰ্ম্মিত । কালীঘাটের বর্তমান সেবাইত হালদারগণ এই দেবস্থানের তত্ত্বাবধান করিয়া থাকেন। কালীঘাটে অনেকগুলি ধৰ্ম্মশালা আছে । বাহির হইতে আগত যাত্রিগণ তথায় থাকিয়া গঙ্গাস্নান, দেবীদর্শন ও কলিকাতার অন্যান্য দ্রষ্টব্য দেখিতে পারেন। কথিত আছে, কোম্পানির আমলের প্রথমযুগে কোম্পানির তরফ হইতে এই মন্দিরে si creii zaz , “ Life and Times of Carey, Marshman and Ward” নামক গ্রন্থে লিখিত আছে যে একবার ইংরেজ গবর্ণমেণ্ট এদেশে তাহাদিগের সাফলোর জন্য পাচ হাজার টাকার নৈবেদ্য দিয়া এখানে পূজা দিয়াছিলেন। কালীঘাটের পটুয়াদের অঙ্কনপদ্ধতি বাঙালীর নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ; অধুনা ইহা শিল্পরসিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়াছে। কালীঘাটের নিকটবৰ্ত্তী সাহানগর বা কেওড়াতলার মহাশ্মশান একটি দ্রষ্টব্য স্থান । স্বৰ্গীয় স্তর আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, দেশবন্ধু চিত্ররঞ্জন দাশ, মহাপ্রাণ অশ্বিনী কুমার দত্ত, বাগ্মী বিপিনচন্দ্র পাল, দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত ও দেশপ্রাণ বীরেন্দ্রনাথ শাসমল প্রমুখ খ্যাতনামা ব্যক্তিগণের নশ্বরদেহ এইখানেই পঞ্চ ভূতে বিলীন হইয়া গিয়াছে।