পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

& 8 বাংলায় ভ্রমণ বা পেড়ো-বসন্তপুরে যাওয়া যায়। মুন্সীরহাট হইতে পেড়ে বা পাণ্ডুয়া ৫ মাইল পশ্চিমে অবস্থিত। পেড়োর গড়ের ধ্বংসাবশেষ কাণা নদীর উপর অবস্থিত। আদিশূর বংশীয় যামিনীশূর যখন অপার মন্দারের (বর্তমান গড় মান্দারণ) রাজা তখন ভূরিশ্রেষ্ঠ রাজ্যের কায়স্থ রাজা পাণ্ডুদাস র্তাহার সামন্ত নৃপতি ছিলেন। মাদারিয়া খাল বা রোণ নদের তীরে অবস্থিত পাণ্ডুদাসের রাজধানী তাহার নাম অনুসারে পাণ্ডুয়া নামে পরিচিত হয়। গড়মান্দারণ হুগলী জেলার আরামবাগ মহকুমার অন্তর্গত। বঙ্কিমচন্দ্রের " দুর্গেশনন্দিনীতে ” ইহার বর্ণনা আছে। পেড়ে। শব্দটি পাণ্ডুয় শব্দের অপভ্রংশ। তৎকালে ভূরিশ্ৰেষ্ঠ রাজা হাওড়া, হুগলী ও মেদিনীপুর জেলার কিয়দংশ লইয়া গঠিত ছিল এবং বহু শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিত ও ধনী বণিক বা শ্রেষ্ঠীর আবাসস্থল ছিল। ধনাঢ্য শ্রেষ্ঠীদিগের বাসস্থান বলিয়া ইহার নাম ভূরিশ্রেষ্ঠ হয়। বর্তমানে ইহা ভুরশুট বা ভুরশো নামে পরিচিত । রাজা পাণ্ডুদাস বিশেষ ধাৰ্ম্মিক ও বিদ্যোৎসাহী ছিলেন। বৈশেষিক দর্শনের প্রধান ভাষ্য “ন্যায়-কন্দলী" প্রণেতা প্ৰসিদ্ধ নৈয়ায়িক শ্রীধর ভট্ট বা শ্রীধরাচার্যা তাঙ্গর সভাপণ্ডিত ছিলেন । ৯৫৪ খৃষ্টাব্দে চন্দেলরাজ যশোবৰ্মা মিথিলা ও গৌড় জয় করেন এবং ভূরিশ্রেষ্ঠ রাজের সহিত তাহার পরিচয় ঘটে। চন্দেল রাজের সভাকবি কুষ্ণ মিশ্র প্রণীত “প্ৰবোধ চন্দ্রাদয়" নাটকে ভূরিশ্ৰেষ্ঠ রাজ্যের বিশেষ সুখ্যাতি আছে। পাণ্ডুদাসের বংশধরগণ হীনবল হইয়া পড়িলে বাগদী জাতীয় বীর শনি ভাঙড় ভূরিশ্রেষ্ঠ রাজ্য জয় করেন। রোণ নদের তীরে দিল্‌-আকাশ নামক স্থানে তিনি তাহার রাজধানী স্থাপন করেন। এই স্থানের নিকটবৰ্ত্তী এক অরণ্য মধ্যে তিনি এক ভয়ঙ্কর ভৈরবী মূৰ্ত্তি প্রতিষ্ঠা করিয়া তাঙ্গার নিকট নরবলি দিতেন। এই দেবী এখনও দিল-আকাশে পূজিত হইতেছেন। একবার দেবীর সম্মুখে অষ্টমবর্ষীয় এক ব্রাহ্মণ কুমারকে বলি দিবার জন্য উপস্থিত করা হইলে বাগদী রাজার কাপালিক গুরু স্নেহপরবশ হইয় তাহার প্রাণরক্ষা করেন ও স্বয়ং ভঁাতাকে পুত্রবৎ লালন পালন করেন ও যুদ্ধ বিদ্যা শিক্ষা দেন। বয়োপ্রাপ্ত হইয়া এই ব্রাহ্মণকুমার শনি ভাঙড়কে পরাজিত করিয়া স্বয়ং ভূরিশ্রেষ্ঠ রাজ্যের রাজা হন । ইনি চতুরানন নিয়োগী নামে পরিচিত ছিলেন। চতুরানন রাজ্য অধিকার করিয়া বৰ্ত্তমান পেড়ো হইতে ৫ মাইল পশ্চিমে দামোদর নদের তীরে ভবানীপুর নামক স্থানে রাজধানী স্থাপন করেন। এই স্থান এখন গড়ভবানীপুর নামে পরিচিত। চতুরাননই ভূরিশ্রেষ্ঠ রাজ্যের ব্রাহ্মণ রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। র্তাহার কোন পুত্র ছিল না । তাহার মৃত্যুর পর তাহার জামাত সদানন্দ মুখোপাধ্যায় রাজা উপাধি লাভ করিয়া ভূরিশেষ্ঠের অধিপতি হন। এই বংশীয়গণ বহুকাল ধরিয়া গড়ভবানীপুর ও পেড়ে বসন্তপুরে রাজত্ব করেন। উত্তরকালে নবাব মুরশিদকুলি খাঁর সহায়তায় বৰ্দ্ধমানরাজ কীৰ্ত্তিচন্দ্র গড়ভবানীপুরের শেষ রাজা লক্ষ্মীনারায়ণকে বিতাড়িত করিয়া স্বয়ং গড়ভবানীপুর ও পেড়োর গড় হস্তগত করেন। পেড়োর গড়ের শেষ রাজা নরেন্দ্র নারায়ণের পুত্র মহাকবি ভারতচন্দ্র রায় গুণাকর নষ্ট পৈতৃক সম্পত্তি উদ্ধারে অকৃতকাৰ্য্য হইয়া অবশেষে নবদ্বীপাধিপতি মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের আশ্রয় গ্রহণ করেন ।