পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ববঙ্গ রেলপথে বাংলা দেশ br今 মাথা ২০ মাইল দূরবর্তী খুলনা শাখা লাইনের উপর অবস্থিত বনগ্রাম জংশন পৰ্য্যন্ত গয়াছে; এই শাখা পথে মাঝেরগ্রাম ও গোপালনগর উল্লেখযোগ্য স্টেশন। তৃতীয় একটি শাখ ১৩ মাইল দূরবর্তী শান্তিপুর পর্য্যন্ত গিয়াছে ; এই পথে তিনটি স্টেশনের মধ্যে ফুলিয়া ও শান্তিপুর প্রধান। রাণাঘাট জংশন হইতে মাঝেরগ্রাম ৯ মাইল দূর । এই স্থানের তিন মাইল উত্তরে “ দেগার ঢিবি ” নামে একটি প্রাচীন দুর্গের ধ্বংসাবশেষ দৃষ্ট হয়। কথিত আছে, ইহা দেবপাল বা দেপাল নামক কুম্ভকার জাতীয় রাজার রাজধানীর ধ্বংসাবশেষ । দেগার প্রাচীন নাম দেবগ্রাম। ভারতচন্দ্রের “ অন্নদামঙ্গলে ” দেগাএর দেপাল রাজার উল্লেখ আছে । জনশ্রুতি যে এই দেবপাল জনৈক সন্ন্যাসীর নিকট হইতে একখানি পরশ পাথর অপহরণ করিয়া বিপুল ধনসম্পত্তি লাভ করেন ও স্বীয় নামানুসারে বাসস্থানের নাম দেবগ্রাম রাখিয়া তথায় স্বাধীন রাজার হ্যায় রাজ্য করিতে থাকেন। কালক্রমে স্থানীয় মুসলমান শাসন কৰ্ত্তার সহিত র্তাহার মনোমালিন্ত উপস্থিত হইলে তিনি উহার মীমাংসা করিবার জন্য দিল্লীতে বাদশাহের নিকট গমন করেন। যাত্রাকালে তিনি জয় ও বিজয় নামক শ্বেত ও কৃষ্ণবর্ণের তুইটি পারাবত সঙ্গে লইয়া যান এবং স্বীয় মহিষীকে বলিয়া যান যে যদি দরবারে তিনি সফলকাম হন তবে শ্বেত পারাবত জয়কে ছাড়িয়া দিবেন ; সে দ্রুতগতিতে উড়িয়া এই শুভ সংবাদ বহন করিয়া আনিবে । আর যদি কৃষ্ণ পারবত বিজয় প্রথমে আসে তাহা হইলে বৃঝিতে হইবে যে ফল অশুভ, তখন আত্মসম্মান রক্ষার জন্য মহিষীকে উপযুক্ত ব্যবস্থা অবলম্বন করিতে হইবে । রাজা দেবপাল সম্রাট দরবারে সফলকাম হইয়া গুহে প্রত্যাগমন করিতেছিলেন । কিন্তু র্তাহার অনুচর ভুলক্রমে জয়ের পরিবর্তে বিজয়কে মুক্ত করিয়া দেয়। কৃষ্ণ পারাবতের আগমন লক্ষা করিয়া মহারাণী বুঝিলেন যে সংবাদ অশুভ ; তখন অন্তঃপুর মধ্যস্থ পুষ্করিণীতে ডুবিয়া তিনি প্রাণত্যাগ করিলেন। দেবপাল এই নিদারুণ ভুল সংশোধনের জন্য অতি দ্রুতগামী অশ্বে আরোহণ করিয়া রাজধানী অভিমুখে যাত্রা করলেন। কিন্তু তিনি পৌঁছিয়। দেখিলেন যে মহারাণী ইতিমধ্যেই প্রাণ বিসর্জন দিয়াছেন। মনের দুঃখে তিনিও সেই পুষ্করিণীতে ডুবিয়া প্রাণত্যাগ করিলেন। দেবগ্রাম তখন মুসলমান শাসনকৰ্ত্তার অধিকারে আসিল । অনেকে বলেন যে মুসলমান শাসন-কৰ্ত্তার নিকট হইতে উৎকোচ গ্রহণ করিয়া দেবপালের অনুচর ইচ্ছা করিয়া জয়ের পরিবর্তে বিজয়কে ছাড়িয়া দিয়াছিল। দেগার ঢিবিতে কারুকার্য খচিত বহু ইষ্টক এখনও দেখিতে পাওয়া যায়। এই স্থান এখন জঙ্গলের দ্বারা সমাচ্ছন্ন হইয়া রহিয়াছে। রাণাঘাট জংশন হইতে গোপালনগর স্টেশন ১৪ মাইল দূর। এই স্থান একটি বিখ্যাত বাণিজ্যকেন্দ্র। এখানকার কাচাগোল্লা অতি উৎকৃষ্ট । গোপালনগর হইতে ৭ মাইল দক্ষিণে অবস্থিত চৌবেড়িয়া গ্রাম “নীলদর্পণ" প্রণেতা প্রসিদ্ধ নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্র মহাশয়ের জন্মস্থান । এই গ্রামটি যমুনা নদীর উপর অবস্থিত। ইহার প্রাচীন নাম চতুৰ্ব্বেষ্টিত ছৰ্গ। এখানে মুসলমান আমলে কাশীনাথ রায় নামক জনৈক কায়স্থ বংশীয় পাজ রাজত্ব করিতেন। র্তাহার তুর্গের চারিদিকের খাতেই যমুনা নদী প্রবাহিত হইভ লিয়া ইহার নাম ছিল চতুৰ্ব্বেষ্টিত তুর্গ। এই দুর্গটি তুর্ভেদ্য ও সুরক্ষিত ছিল। রাজ পশিীনাথ রায় পাঠান বিজয়ে মোগল বাহিনীকে বিশেষ সাহায্য করিয়া রণনৈপুণ্যের