পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাজল রেখা 8N) তারপরে স্বর্ণ গাড়তে জল রাখিয়া দিলেন। “কেওয়া খয়েরে” সুগন্ধ করিয়া সোণার বাটাতে পান রাখিলেন, এবং রান্না ঘরের এক কোণে যাইয়া বিনীতভাবে অপেক্ষা করিতে লাগিলেন । এইসমস্তই মন্ত্রীর উপদেশ মত কাজলকে পরীক্ষা করার জন্য ব্যবস্থা হইয়াছিল। আর এক দিন কোজাগর লক্ষ্মীর পূজা। রাণী ও কঙ্কণ-দাসীকে ভাল করিয়া আলপনা আঁকিতে বলা হইল। রাজা বলিলেন, “আমার বন্ধু আজ আবার আসবেন, আলপনা যত ভাল পারি,-করিবে ।” নকল রাণী আঁকিলেন বকের পা, সরিষার টাইল (পাত্ৰ), কাকের ঠ্যাং এবং ধানের ছড়া । কাজল সরু শালী ধানের চাউল আগের দিন জলে ভিজাইয়া-তাহা বাটিয়া অতি মসৃন পিঠালির প্রলেপ তৈরী করিলেন। সর্বপ্ৰথম বাপমায়ের পাদ-পদ্ম আঁকিলেন,-উহ। তাহার। প্ৰাণে গাথা ছিল । তারপরে ধানের গোলা আর ধানের ছড়া আঁকিলেন—এবং অবকাশ-স্থানগুলি লক্ষ্মীর পদচিহ্ন দ্বারা পূর্ণ করিলেন। কৈলাসে শিব দুর্গার যুগল ছবি, হংস রথে মা বিষহরি দেবী, ও ডাকিনীদের মূৰ্ত্তি—দিকপ্রান্তে সিদ্ধ বিদ্যাধরীদের ও বন দেবীর ছবি এবং আরও কত কি আঁকিলেন ; সেওরা গাছের নিয়ে বন দেবীর মূৰ্ত্তি অতি সুন্দর হইল। তার পরে রক্ষা কালীর ছবি,-রাম লক্ষ্মণ সীতার মূৰ্ত্তি চিত্রিত হইল। কাৰ্ত্তিক গণেশ প্ৰভৃতি কোন দেবতাই বাদ পড়িল না। এসকল অঙ্কন করিয়া কাজল রেখা হিমাদ্রি পর্বত, লঙ্কার পুষ্পক রথ, ইন্দ্ৰ যম ও তাঁহাদের আবাস স্থল, গঙ্গা-গোদাবরী প্ৰভৃতি নদী, সমুদ্রের ঢেউ, চন্দ্ৰ-সূৰ্য্যের চিত্র, প্ৰভৃতি কত ছবিই যে আঁকিলেন, তাহার সীমাসংখ্যা নাই । শেষ চিত্ৰ ভাঙ্গা মন্দির। ঘোর অরণ্য এবং মৃত কুমারের চিত্র ; কিন্তু কাজল কোন খানেই নিজের ছবি আঁকিলেন না । সূচি রাজ ও র্তাহার সভাসদ দিগের চিত্র ও এই সুদৃশ্য আলীপনা অলঙ্কত করিল। অবশেষে বৃতের বাতি জ্বালিয়া চিত্রকরী তাহার অঙ্কিত আলপনাকে গলবস্ত্ৰ হইয়া প্ৰণাম করিলেন ।