পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাজল রেখা @Գ পল্লী-কল্পনা যে সকল রমণী-চিত্র আমাদের গোচর করিয়াছে, তাহার প্ৰত্যেকটিতে কোন না কোন গুণ বিশেষভাবে ফুটিয়াছে। সাধুত্ব ও চরিত্রগুণে সকলেই পূজা ও শ্রদ্ধা-ভাজন, কিন্তু কাহারও মধ্যে অদ্ভুত তেজস্বিতা, উদ্ভাবনী শক্তি, কাহারও মধ্যে চূড়ান্ত স্বামী-প্ৰাণতা, কাহারও মধ্যে অপূর্ব সংযম দৃষ্ট হয় ; প্ৰত্যেকেরই মধ্যে একটা বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান, এবং আশ্চৰ্য্যের বিষয় এই যে প্ৰায় এক শত পল্লী-চিত্র আমাদের হস্তগত হইয়াছে, তন্মধ্যে পুনরাবৃত্তি দোষ, এবং একটি আদর্শকেই বারংবার বেশ পরিবর্তন পূর্বক প্রদর্শন, অনৰ্থক বাক্য-বাহুল্য প্রভৃতি অসঙ্গতি ও অপূর্ণতা নাই। প্ৰত্যেক চরিত্র ভিন্ন ভিন্ন এবং সুস্পষ্ট রেখায় অঙ্কিত। এদেশে যে সকল কবি প্ৰাচীন কালে মহিলা-চরিত্র আঁকিতে গিয়াছেন, তাহার সমস্ত স্থানেই সে সকল চরিত্র সীতা-সাবিত্রীর ছাচে ঢালাই করা হইয়াছে ; কিন্তু বাঙ্গালার এই পল্লীর ঐশ্বৰ্য্য কি বিরাট ! এই চিত্ৰশালায় প্ৰায় ৫০টি আদর্শ রমণী পাইতেছি, তাহার কাহারও সাহস দুৰ্জয়, কেহ উগ্র-প্ৰকৃতি, কেহ নানা বিরুদ্ধ অবস্থার পরীক্ষায় ও স্বীয় অকুষ্ঠিত নিৰ্ভিকতা বলে সর্বত্রজয়ী। এই সকল চিত্র-পরিকল্পনায় পাঠক কোন নৈতিক বা ধৰ্ম্ম-সূত্ৰ পাইবেন না। পল্লী-কবির হাতের কাছে একটিমাত্র শাস্ত্র ছিল, অন্য কোন পণ্ডিতী অনুশাসন ছিল না। সে শাস্ত্ৰপ্ৰকৃতি । এই গুরুই কবিকে ভালমন্দের বিচার শিখাইয়াছেন, তিনি অন্য কোন শাসনের অনুবৰ্ত্তী হন নাই। কাজল-রেখা মূৰ্ত্তিমতি সহিষ্ণুতা। এদেশের নারী-জীবন নিরবচ্ছিন্ন কষ্টের ইতিহাস,-নানাবিধ সামাজিক দুৰ্দশা ও অবস্থার বৈগুণ্যে নারীকে প্রায়ই সকল কষ্ট নীরবে সন্থা করিতে হয়। এই সহিষ্ণুতা কুলারমণীর স্বাভাবিক সাধুত্ব ও লজ্জাশীলতার উপর দাড়াইয়া দেব-লোকের কি আপুৰ্ব্ব পারিজাত পুষ্প উৎপন্ন করিতে পারে, কাজল তাঁহারই দৃষ্টান্ত । কাজলকে পিতা ভীষণ জঙ্গলে ভাঙ্গা মন্দিরে একটি শবের পার্থে রাখিয়া গৃহে ফিরিয়া আসিলেন। ইতিপূর্বেই তিন দিন কাজল উপবাসী ছিলেন, তারপর সাত দিন সাত রাত্ৰি মৃত কুমারের শয্যায় বসিয়া তিনি র্তাহার সর্বাঙ্গের শল্য উদ্ধার করিলেন। কিন্তু যে মুহূৰ্ত্তে ভাগ্য-চক্রনেমির পরিবর্তন হইবে এবং তিনি সুখের মুখ দেখিবেন, তখনই কি অভূতপূর্ব