পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলার পুরনারী صراع) বিপদ উপস্থিত হইল ! যাহাকে সমদুখী মনে করিয়া তাহার হৃদয় করুণায় বিগলিত হইয়াছিল, যাহাকে দুঃখের সহচরী ভাবিয়া অতি স্নেহে হাতের কঙ্কণ দিয়া কিনিয়াছিলেন, সেই রমণীর মনে ‘‘অসুরভাব’ জাগিয়া উঠিল এবং সে এমনই আঘাত দিল, যাহাতে তাহার জীবনের প্রথম অংশ একান্ত ভাবে ব্যর্থ হইয়া গেল । কিন্তু সমস্ত অবস্থাই সহিতে হইবে, সন্ন্যাসী বলিয়া গিয়াছেন, “জোর করিয়া কপালের দুঃখ খণ্ডাইতে যাইও না।” দৈবের বিধান ও সন্ন্যাসীর উপদেশ মানিয়া কাজল চুপ করিয়া রহিলেন ; এত বড় একটা মিথ্যার ব্যাপার তঁহার চক্ষের উপর বহিয়া গেল, কোথায় রাণী হইবেন, তৎপরিবর্তে তিনি তাহার নিজের দাসীর দাসী হইলেন । এই অকম্পিত দীপ-শিখার মত নির্বাক রমণী চিত্রে আমাদিগের পরম বিস্ময় উৎপাদন করে। অন্য কেহ হইলে কত আৰ্ত্তনাদ, কত ক্ৰোধ, কত যুক্তি, কত প্ৰমাণ উপস্থিত করিয়া সমস্ত বায়ুমণ্ডল আলোড়িত করিয়া ফেলিতেন। কিন্তু কাজল নিম্পন্দ নিশ্চল,- তিনি দৈব মানিয়া মহাদুঃখের জীবন বরণ করিয়া লইলেন। দৈব কি ? লক্ষ্মণ যখন ধনুৰ্বাণ আস্ফালন করিয়া বলিতেছিলেন, “হনিষ্যে পিতরাং বৃদ্ধং কৈকেয্যাসক্তমানসম” পুরুষকারের এই জলন্ত মুক্তিকে প্ৰবোধ দিয়া রাম বলিলেন—“লক্ষ্মণ, ইহা দৈব ! যে ঘটনা সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত, যাহা কোন দিক দিয়া ঘটে-মানুষ তাহা বুঝিতে না পারিয়া হতবুদ্ধি হইয়া দাড়ায়,-সেই সকল ঘটনা দৈব। রাজা দশরথের আমি প্ৰিয়তম সন্তান-কৈকেয়ী আমাকে কৌশল্যা অপেক্ষাও স্নেহ করিয়া আসিয়াছেন—আজকার ব্যাপার সম্পূর্ণরূপে কল্পনাতীত, এই অঘটন কি করিয়া ঘটিল। তাহা আমি জানি না ; ইহা দৈব, পুরুষকার দিয়া ইহার প্রতিকার হইবার নহে ।” প্ৰত্যেকের জীবনে সময়ে সময়ে এইরূপ দৈবের খেলা দেখা যায় ; তখন যাহা সত্য, যাহা দিবালোক, তাহা প্ৰমাণ করা যায় না, যাহা হৃদয়ের দরদ দিয়া সম্পূর্ণ নিঃস্বাৰ্থভাবে করা যায়—নিতান্ত অন্তরঙ্গেরা এমন কি যাহাঁদের ইষ্টের জন্য নিজ সুখ জলাঞ্জলি দিয়া শত দুঃখ বরণ করিয়া