পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Vo <tes পুরনারী বিপদের সময় কি কেহ আত্মরক্ষার চেষ্টা না করিয়া থাকিতে পারে ? কিন্তু নিজের উদ্ধার-সাধনের জন্য বিপন্ন ব্যক্তি যে চেষ্টা করিবে, নির্বিবকার হইয়া দৈবের উপর স্বার্থকে নির্ভর করিয়া থাকিতে তদপেক্ষা শতগুণ শক্তির দরকার ; কাজল সেই অপরিমিত ধৈৰ্য্য ও সহিষ্ণুতার আদর্শ। কাজলের স্বভাবটি ছিল সহিষ্ণু-তাহার উপর তিনি পরম গুণবতী ও । ক্ষমাশীল ছিলেন। কঙ্কণ দাসীর সঙ্গে তিনি যে ব্যবহার করিয়াছেন, অন্য কেহ কি তাহা পারিত ? তাহার চরিত্রের মাধুৰ্য্যের সর্বাপেক্ষা বড় প্রমাণ সেই দিন তিনি দিয়াছিলেন যে দিন রাজপুরী হইতে বিদায়ের প্রাক্কালে তিনি কঙ্কণ দাসীর নিকট ক্ষমা চাহিয়াছিলেন, তখন র্তাহার চক্ষু দুটি EC61 Vs | পাঠক হয়ত মনে করিতে পারেন, এসকল কথা মাথা ডিঙ্গাইয়া যায়, কোন স্ত্রীলোক কি বাস্তব জগতে এতটা উদারতা দেখাইতে পারে ? কিন্তু আমি আমার দেশের মেয়েদের হয়ত কিছু জানি, কারণ পল্লীজগত আমার পরিচিত ; এখন সে জগত আর নাই। আমার ধারণা আমাদের দেশের পূর্বেকার মেয়েরা ধৰ্ম্ম ও নীতির সর্বোচ্চ শৃঙ্গ অনায়াসে আরোহন করিতে পারিতেন। জ্ঞানী ছিল শুকপাখী, তাহার কাজলের উপর দরদের অন্ত নাই । শেষ অধ্যায়ে যখন সে কাজলের দুঃখের জীবন বৰ্ণনা করিতেছিল, তখন সে অশ্রুরুদ্ধ কণ্ঠে সময়ে সময়ে থামিয়া স্বর পরিষ্কার করিয়া লইয়াছে। কাজলের দুঃখে সে নিজে অত্যন্ত দুঃখ পাইয়াছে। অথচ সে সত্য কথা বলিয়া কাজলকে রাজসভায় সমর্থন করিল না। যাহা কিছু বলিল তাহা দিবা ও রাত্রির সন্ধিস্থলের মত, প্ৰহেলিকাময় ও অস্পষ্ট। এরূপ করার কারণ কি ? পাখী। জানিত, কাজলের মাথার উপর দিয়া তখন প্ৰবল দৈব-ঘূর্ণিবায়ুর মত চলিয়া যাইতেছে। এসময় সত্য বলিয়া চিৎকার করিলে তাহা প্রমাণে টিকিবে না ; দৈব তাহা উড়াইয়া লইয়া যাইবে, এজন্য দুঃখাৰ্ত্ত কণ্ঠে সে দ্ব্যৰ্থবোধক কথা বলিল। কাজলের আদৃষ্টের দুঃখ তাহাকে ভোগ করিতেই হইবে-সময়ের পূর্বে তাহা খণ্ডিবে না, বরং বাধা পাইলে তাহার গতি আরো বৃদ্ধি পাইবে ।