পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ae বাংলার পুরনারী রাজা বিচারাসনে বসিয়াছিলেন। মানিক চাকলাদারকে দেখিয়া ক্রদ্ধভাবে বলিলেন, “তুমি কত ধন পাইয়াছ ? আমাকে না জানাইয়া তাহা আত্মসাৎ করিয়াছ !” চাকলাদার বলিলেন—“কিসের ধন ? আমি তো কিছুই জানি না।” রাজা তঁহার কথা বিশ্বাস করিলেন না, ধন-লোভে তিনি উত্তেজিত অবস্থায় ছিলেন। চাকলাদারকে বন্দীশালায় লইয়া যাইতে আদেশ করিলেন, সেখানে তাহার পায়ে লোহার শৃঙ্খল পরানো হইল এবং বুকে পাথর চাপা দিয়া ধনের কথা প্ৰকাশ করিবার জন্য পীড়ন করিবার ব্যবস্থা হইল । এদিকে মানিক চাকলাদারের পরিবারে যখন এই অচিন্তিতপূর্ব বিপদ, এবং তঁাহারা দুঃখে অবসন্ন, তখন কারকুন যাইয়া চাকলাদারের দ্বাদশ বর্ষীয় বালক সুধনের কাছে বন্ধুর ছদ্মবেশ ধরিয়া উপদেশামৃত বর্ষণ করিতে লাগিল। চাকলাদার গিয়াছেন, সুধন তরুণ বয়স্ক হইলেও তো সে পুরুষ— এবং তাহার উদ্দেশ্য সফলতা লাভের বিস্ত্ৰ স্বরূপ। সুতরাং এই কণ্টকটিকেও পথ হইতে সরাইতে হইবে । কারকুণ বলিল—“তোমার এই মহা বিপদের সময় তোমার পিতার জন্য কি করিতেছ ? কি আশ্চৰ্য্য, তুমি তোমার পিতার উদ্ধারের জন্য কিছু করিতেছ না ! ধনপতি সিংহলে যাইয়া রাজরোষে বন্দী হইলে তাহার দ্বাদশ বর্ষীয় পুত্ৰ মাতার নিষেধ না শুনিয়া পিতাকে উদ্ধার করিয়া আনিবার জন্য—সুদূর দক্ষিণ দ্বীপে রওনা হইয়া গিয়াছিল। পিতার আদেশে রামলক্ষ্মণ রাজত্বের আশা ছাড়িয়া দিয়া কৌপীন ও জটা পরিয়া বনে গিয়াছিলেন, -পরশুরাম তাহার পিতার আদেশে তাহার মাতা রোনুকার শিরচ্ছেদ করিয়াছিলেন। পিতা মহাগুরু, নিজের জীবন বিসর্জন করিয়াও তোমার তঁহাকে রক্ষার জন্য প্ৰাণপণ চেষ্টা করা উচিত।” সুধন অশ্রুপূৰ্ণ চােখে বলিল, “কি করিতে পারি? আপনি উপদেশদিন।” কারকুণ বলিল, “তুমি আগৌণে রঘুপুরে চলিয়া রাজার সঙ্গে দেখা করিয়া তিনি যাহাতে সন্তুষ্ট হন, তাহার চেষ্টা কর। আর দেখ, এক থলিয়া মোহর লইয়া যাও, এবং তাহ রাজাকে নজর দিও।”