পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

今も বাংলার পুরনারী নিতান্ত অসহায় অবস্থায় তাহার অন্তর কঁাদিয়া উঠিল। একান্ত নির্ভরপরায়ণার সেই অন্তরের ক্ৰন্দন বুঝি বিধাতার কৰ্ণে পৌছিল। সেই পথে আর একটি মাত্র পথচারী, বৃদ্ধ একটি মহিষপালক। কমলা তাহাকে দেখিয়া যেন প্ৰাণ পাইল। অগ্রসর হইয়া—তাহাকে বলিল, “আমি নিরাশ্রয়—আমার কেহ নাই, তুমি আমার ধৰ্ম্মের বাপ, এই রাত্রিটির জন্য আমাকে আশ্রয় দাও । বাবা, আমি বড় বিপদে পড়িয়াছি, তোমার বাড়ীর গোয়াল ঘরের একটি কোণে আমি আঁচল পাতিয়া শুইয়া থাকিব, আমি ভাত-জল চাই না, গোয়াল ঘরের এক কোণে আজ রাতে থাকিবার একটু জায়গা পাইলেই কৃতাৰ্থ হইব।” মহিষাল তাহার চক্ষুকে বিশ্বাস করিতে পারিল না,-এমন রূপ এমন গা ভরা গয়ন—এ তো মানুষের মূৰ্ত্তি নহে, এ যে সাক্ষাৎ মা লক্ষ্মীর মূৰ্ত্তি। তাহার একান্ত বিশ্বাস হইল লক্ষ্মী স্বৰ্গ হইতে তাহাকে ছলনা করিতে আসিয়াছেন ; সে করযোড়ে বলিল, “যদি দয়া করিয়া এই বুড়ে ছেলেকে দেখা দিয়েছ, তবে মা ছেড়ে যেওনা । আমার ঘরে আইস, আমাকে বর দেও, যেন আমার মহিষ ও গরু দ্বিগুণ দুধ দেয়, যেন আমার ক্ষেতে সোনার ফসল হয়, আইস আমার ভাঙ্গা ঘরে মা লক্ষ্মী, আমার ভাঙ্গ ঘর সোণার ঘর হইয়া যাইবে।” কমলা মহিষালের বাড়ীতে আসিল, প্ৰতি দিনে তিন বার মহিষালকে রাধিয়া খাওয়ায় ; গামছা-বাধা দৈ তৈরী করে, গোয়াল ঘরে ধোঁয়া দেয়, ঘর দোর বাট দিয়া ঝকঝকে তকতকে করিয়া রাখে, মহিষালের আনন্দের সীমা নাই। তাহার ঘরে সত্যই লক্ষ্মী আসিয়াছেন, ভাবিয়া দিনরাত সে পূজার উৎসবে মাতিয়া আছে। সন্ধ্যাকালে মহিষ চরাইয়া মহিষাল বাড়ী আসিয়া দেখে, খড় বিছাইয়া কমলা তাহার জন্য বিছানা করিয়া রাখিয়াছে, গরম ভাত কলার পাতে পরিবেশন করিয়াছে, তাহা হইতে ধোঁয়া উঠিতেছে। বিন্নি ধানের খই, খেজুরের গুড় ও গামছা বাধা দৈ খাইয়া বুড়োর কি ক্ষুৰ্ত্তি ! সে যেন মা লক্ষ্মীকে পাইয়া আবার ছেলেমানুষ হইয়া গিয়াছে। তিন দিন কমলা মহিষালের কুটিরে বাস করিল।