পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চাকলাদারের কন্য صوNC( কমলা স্বীয় শৈশবের ইতিহাস এইরূপে কহিল : “জ্যৈষ্ঠ মাস, ষষ্ঠ তিথি, শুক্রবার শেষ রাত্রে যখন আকাশ মেঘমণ্ডলে আবৃত ছিল এবং ঘোর অন্ধকার সমস্ত দিক দেশ ব্যাপিয়া রাজত্ব করিতেছিল, সেই সময় এই অভাগিণীর জন্ম । মাতা আমার নাম রাখিলেন। কমলা । আমার বয়স যখন চা’র, তখন আমার এক সহোদরের জন্ম হইল। “পূৰ্ণিমার চাদ যেমন দেখি মায়ের কোলে সৰ্ব্ব দুঃখ দূর হ’ল তার জন্ম কালে ৷ কোলে করি কঁাখে করি, করি দোলা-খেলা । এইরূপ যায় নিত্য শৈশবের বেলা ॥ “এই ভাবে লীলা-খেলা করিয়া আমার সুখের শৈশব অতীত হইল। কিশোর বয়সে আমাকে মা সৰ্ব্বদা সতর্ক করিতেন, -একা বাহিরে যাইতে নিষেধ করিতেন। আমার গায়ের গৌরবর্ণ আরও উজ্জল হইল এবং নানা অলঙ্কার আমার অঙ্গের শ্ৰীবৃদ্ধি করিল। আমি প্ৰত্যহ দীঘির সানবাঁধা ঘাটে সহচরীদের সঙ্গে স্নান করিতে যাইতাম, তাহারা চাঁপার কলি ও বকুল ফুল দিয়া আমার দীঘল চুল বাঁধিয়া দিত, শরীরে গন্ধ তৈল মাখাইত, এবং আভের চিরুণী দিয়া চুল আঁচড়াইয়া দিত। “একদিন পৌষমাসের প্রভাত। বার মাসের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ পৌষমাস,— দেখিতে দেখিতে সূৰ্য্যোদয় হয়, আমি প্ৰত্যুষে উঠিয়া বনদুর্গার পূজা শেষ করিলাম এবং সুন্নানের জন্য প্ৰস্তুত হইলাম। আমার সখীরা আমার দেহে ও চুলে গন্ধতৈল মাখাইয়া দিল। তাহার পূর্বে সহচরীরা আমার হীরামতির হার গলা হইতে খুলিয়া রাখিল । আমরা আনন্দে মাতিয়া দীঘির ঘাটে গেলাম, আমার কঁাখে সোনার কলসী-সখীদের কেহ নৃত্য করিতে লাগিল, কেহ গান গাইল ; এই ভাবে আমরা তরল পাদক্ষেপে হাসি ঠাট্টা ও রং তামাসা করিতে করিতে ঘাটে যাইয়া পৌছিলাম। সেখানে যাইতে মাটীতে পা ঠেকিয়া আমি বাধা পাইলাম, আমি কি জানি সে পথে আমাকে দংশন করিতে বিষধর প্রতীক্ষা করিতেছে! সে দিনের সাক্ষী এই কারকুণ, জলের ঘাটে ইহাকে দেখিয়ছিলাম--তখন কিছুই বুঝিতে পারি নাই।