পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

3S বাংলার পুরনারী বিবাহ ও শেষ ইহার পরে কমলার সঙ্গে প্ৰদীপকুমারের বিবাহের প্রস্তাব পাকা হইয়া গেল। সোণার কালিতে লেখা পত্রের উপর সাতটা সিন্দুরের দাগ দেওয়া হইল এবং সেই সংবাদ দেশে-বিদেশে আত্মীয়বন্ধুদের মধ্যে প্রচারিত হইল। শত শত ময়রা মিঠাই প্ৰস্তুত করিতে নিযুক্ত হইল এবং সাতদিন সাতরাত্রি বাদ্যভাণ্ডের শব্দে ও নৃত্যগীতে রাজপুরী প্ৰমত্ত হইয়া রহিল। গুরু-পুরোহিত ও পণ্ডিতমণ্ডলীর কলরবে প্ৰাসাদ মুখরিত হইল ; বনদুর্গা, একচুড়া প্ৰভৃতি দেবতার পূজা হইলে জোড়া পাটা দিয়া ইহাদের পূজা সমাপ্ত করা হইল, ডরাই নামক গ্ৰাম্য-দেবতার পূজায় মহিষ বলি হইল। অতঃপর অন্তপুরিকার নান্দীমুখের মাটি কাটিল, এবং কমলার মা ও মামী মাথায় “সোহাগের ডালা’ করিয়া এয়োদিগকে লইয়া গান করিতে করিতে বাড়ীতে বাড়ীতে সোহাগ মাগিতে গেলেন,-ভঁাহাদের পশ্চাৎ পশ্চাৎ বাদ্যকরেরা বাজনা বাজাইতে বাজাইতে চলিল। গীত ও হুলুধ্বনিতে বিবাহের মণ্ডপ মুখরিত হইল। বর ও কনে জলের ঘট সম্মুখে করিয়া বসিলেন। নবদ্বীপ হইতে নাপিত আসিয়াছিল, সে সোণার খুর দিয়া কামাইতে লাগিল, সেই সময় মেয়ের ক্ষৌরকার্য্যের গান করিতে লাগিল। তখন বরকন্যাকে হলুদ মাখাইয়া স্নান করান হইল, গায়ে হলুদের যত গান জানা ছিল— মেয়েরা তাহা গাহিল । কমলাকে “আসমানতারা” নামক শাড়ী পরান হইল, তাহা হাতে লইলে ঝলমল করিয়া উঠে, শূন্যেতে লইলে তাঁহা উড়িয়া যায়, মাটিতে রাখিলে মনে হয়, নীলতারা-ভূষিত আকাশের এক খণ্ড মাটিতে পড়িয়া গিয়াছে। কমলার কাণে স্বর্ণ-চম্পক দুল ও মণিমণ্ডিত কুমকা পরান হইল, নাকে সোণার “বলাক, মস্তকে স্বর্ণ সিথি, পায়ে গুঞ্জরী ও হাতে ৰাজুবন্ধ ও কঙ্কণ পরাইয়া তাহাকে যখন দাড় করান হইল, তখন সত্য সত্যই সে দেবীপ্ৰতিমার মত দেখাইল। “গলায় পরাইল এক হীরার হাঁসুলী” মেয়েলী আচার মত ছাতনাতলায় বীরকন্যার বরণ হইল ।