পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ତ8 বাংলার পুরনারী হুলিয়া গ্রামে নিজবাটীতে আর কয়েকদিন কারকুণকে ভুলাইয়া— থাকিতে পারিত। পূর্ববঙ্গ গীতিকায় ভেলুয়া ভোলা সদাগরকে এইভাবে ভাড়াইয়া রাখিয়াছিলেন, এমন কি দেওয়ান জাহাঙ্গীরকে মলুয়া ও নানাছলে প্ৰতারিত করিয়াছিলেন-আদর্শ সততা ও সাধবীর পবিত্ৰতা থাকা সত্বেও ইহার উপস্থিত ক্ষেত্রে চতুরতা প্ৰদৰ্শনে দ্বিধাবোধ করেন নাই। কিন্তু কমলা কারকুণকে বিবাহ করার প্রস্তাব শুনিয়া মুখের উপর যে উত্তর দিয়াছিলেন, তাহাতে দেখা যায় তাহার সততা একেবারে সাংসারিক হিতাহিত-জ্ঞানের সীমার বাহিরে, তাহা অমোঘ ও বজকঠোর, সুতরাং তাহাকে মহাবিপদের সম্মুখীন হইতে হইয়াছিল। র্তাহার প্রকৃত পরীক্ষা আরম্ভ হইল সেইদিন—যেদিন নিজের শয্যার উপর তিনি মাতুলের চিঠিখানি পাইলেন । এই চিঠি পাওয়ামাত্র তাহার সঙ্কল্প স্থির হইয়া গেল,-সাংসারিক হিতাহিত জ্ঞান এবং ভবিষ্যতের জন্য চিন্তিত দুর্বল চিত্তের সতর্কতা এমন কি মাতার প্রতি অসীম স্নেহ পৰ্য্যন্ত এই দুলালী কন্যাকে বিচলিত করিতে পারিল না। মাথায় বজ্ৰপাত হউক, জলে ডুবিয়া মারি অথবা দসু্যর হাতে প্ৰাণ দিই, সব সহা করিব, কিন্তু কিছুতেই আর মাতুলের বাড়ীর অন্ন খাইব না। হায়! আমাদের দেশের কত শত বলিষ্ঠকায় মনস্বী পুরুষ পর পদাঘাত সহা করিয়াও চাকুরীটীকে আঁকড়াইয়া ধরিয়া আছেন, কেবল স্ত্রী-পুত্ৰ কন্যা ও আশ্রিতদের প্রতি বাৎসল্য বশতঃ ; চাকুরী গেলে তাহদের দশা কি হইবে ইহাই তাহদের আশঙ্কা । কিন্তু কমলা স্ত্রীলোক, একান্ত নিরাশ্রয় ; তাহার আশ্রয়ের একমাত্র খুটি-মোহাতুরী মাতা, তাহাকে হারাইলে তিনি শোকে পাগল হইবেন অথবা মরিয়া যাইবেন, একথা কমলা একবার চিন্তা করিলেন না, নিরাশ্রয়ভাবে অন্ধকার রাত্রে হাওরের পথে কোন দাসু্যর হাতে পড়িবেন, তিনি তো অপূৰ্ব্ব সুন্দরী,-- এসকল চিন্তা তিনি মনে স্থান দিলেন না। র্তাহার অপেক্ষা শতগুণে বলিষ্ঠ, পণ্ডিত ও জ্ঞানী ব্যক্তিরা উপস্থিত বিপদে যে সতর্কতা অবলম্বন করেন, তিনি তাহা একটি বারও করিলেন না,-ধূণায় মুখ ফিরাইয়া কপালে আরও যাহা আছে হউক, এই সঙ্কল্প করিয়া-সেই ভীষণ রাত্রে নিজেকে অদৃষ্টের হাতে ছাড়িয়া দিলেন। কিন্তু