পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চাকলাদারের কন্য এই ভাবে নিজের সততার উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করিয়া যে অপর সমস্ত সাবধানত ত্যাগ করে, সুবিধা-বাদীদের অপেক্ষাও সে পরিণামে অধিকতর জয়ী হয় এবং বিপদে উত্তীর্ণ হয়--কমলার জীবন তাহারই উদাহরণ। এজন্য কমলা আমাদের মত এ দেশের সহস্ৰ সহস্ৰ লোকের অপেক্ষা প্ৰশংসনীয়-- র্তাহার চরিত্র পূজ্য। যে ব্যক্তির বা জাতির এইরূপ তীব্র আত্ম-মৰ্যাদা বোধ আছে, তাহারাই বিজয়ীর স্বর্ণ কুণ্ডল পরিতে পারে, সুবিধা-বাদীরা তাহা পারে না, উপস্থিত বিপদ এড়াইয়া কোনরূপে টিকিয়া থাকিতে 2|icՀ Niq | কমলা বড় ঘরের মেয়ে, তাহার আত্মমৰ্য্যাদা জ্ঞান ও সংযত সহিষ্ণুতা আমাদের শ্রদ্ধা বিশেষ করিয়া আকর্ষণ করে। তিনি কিছুতেই তাহার আত্ম-পরিচয় কুমারকে দিলেন না। রাজদ্বারে তাহার পিতা ও ভ্রাতা চৌৰ্য্যাপরাধে ধৃত ও বন্দী ; তঁহার পরিচয় পাইলে কুমার তাহার প্রতি কি ব্যবহার করিবেন তাহা অনিশ্চিত । সুতরাং যাহাতে র্তাহার অটুট সম্রাম চরিত্ৰ-গৌরব ক্ষুন্ন হয়, এমন কাজ করিতে তিনি স্বভাবতঃই কুষ্ঠিত হইলেন। কিন্তু এই গল্পের শেষভাগে আমরা কমলার স্বরূপ দেখিলাম। পোর্শিয়া যেরূপ বক্তৃতা করিয়া সাইলকের হস্ত হইতে নিজের স্বামীকে উদ্ধার করিয়া ছিলেন, কমলা সেইরূপ এক বিষম পরীক্ষার সম্মুখীন, তাহার বন্দী পিতা ও ভ্রাতা নিৰ্ম্মম মৃত্যু দণ্ডে দণ্ডিত। সেক্ষপিয়র গল্পের একটা প্ৰাচীন কাহিনী পাইয়াছিলেন। সেই কাহিনীর উপর তাহার অলৌকিক কবিপ্ৰতিভার ছটা দিয়া উহা সাজাইয়াছিলেন । কিন্তু এই গল্পের রচক কবি ঈশাণ সেরূপ কোন প্ৰাচীন গল্পের খসড়া পাইয়াছিলেন বলিয়া মনে হয় না। তথাপি কমলার বিবৃতিতে যে অপূর্ব সংযম ও তীক্ষ্ম বুদ্ধি এবং নারীজনোচিত সম্রাম এবং অব্যৰ্থ প্ৰমাণ প্রয়োগের বহর দৃষ্ট হয়, তাহাতে এই বাঙ্গালী নারীর প্রতি পরম শ্রদ্ধায় আমাদের মাথা নত হইয়া পড়ে। এই অতি জঘন্য অভিযোগ প্ৰমাণ করিতে যাইয়া তিনি তঁাহার উচ্চকুলোচিত শীলতা এক বিন্দুও হারাণ নাই।