পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চাকলাদারের কন্য S কমলা নিজের কথা নিজে কিছুই কহেন নাই। দলিলের প্রমাণই যথেষ্ট হইয়াছে। যাহারা সাক্ষ্য দিয়াছেন, তাহারাও যাহাতে জঘন্য কথাগুলি যথাসম্ভব এড়াইয়া যান। অথচ মামলাটি সম্বন্ধে বিচারকগণ নিঃসন্দেহ হন, কমলার বিবৃতি তাতারই অনুকূল। কমলার উক্তি তীক্ষ্ম বুদ্ধি ও নিজের পদ-মৰ্য্যাদা তথা নারীজনোচিত সন্ত্রম এবং লজ্জা বজায় রাখিয়া আত্মসমর্থনের উজ্জল দৃষ্টান্ত-স্থলীয়। তিনি প্রারম্ভে সমস্ত দেব দেবীকে সাক্ষী করিয়াছিলেন, কিন্তু প্ৰাধান্য দিয়াছিলেন সন্ধ্যাতারা ও স্বীয় চক্ষু-জলের উপর। প্ৰকৃতই সেই ধ্রুব নক্ষত্ৰ যাহা প্ৰতি সন্ধ্যায় জগতের কাৰ্য্যাবলী নিশ্চিতভাবে দেখে-এবং তঁাহার চক্ষুজল-যাহ সমস্ত হৃদয় মথিত করিয়া অন্তরের ব্যথার পরিচয় দেয়-এই দুই সাক্ষীই তাহার কাহিনীর যথার্থ পরিচয় দিয়াছিল । কমলার চরিত্রের আর একটা বৈশিষ্ট্য—তাহার বাঙ্গালা দেশের প্রতি আন্তরিক দরদ। বাঙ্গালার শ্যামল প্ৰকৃতি, আম্রমুকুলের গন্ধে ভরপুর, কোকিল কুজনে এবং ভ্রমর গুঞ্জরণে মুখরিত বাঙ্গলার কুটীর, দুৰ্গা-পূজা, বন-দুৰ্গা-পূজা, কাৰ্ত্তিক ও ধান্য-লক্ষ্মীর পূজা-বাঙ্গলার বার মাসে তের পার্বণের মনোহারিত্ব কমলার এই দরদ-পূর্ণ বিবৃতিতে এমন স্পষ্ট হইয়া মনোজ্ঞ ভাবে ফুটিয়া উঠিয়াছে যে আমরা এই কাহিনী পড়িবার সময় চোখের জলের সঙ্গে আমাদের পল্লীমাতাকে বারংবার স্মরণ করিয়াছি। এই গীতিকাটি পরিপূর্ণ ভাবে পল্পীরস মাধুৰ্য্যে ভরা। কমলা দুঃখ কষ্টের চুড়ান্ত সীমায় যাইয়াও পল্লীর আনন্দ ভোলেন নাই। পল্লীরসে চিরদিনই তঁাহার মনকে সরস রাখিয়াছে। ঘোর বিপদের দিনেও নদী বাহিয়া সোণার ময়ুরপঙ্খী নৌকায় প্রিয়জনের সঙ্গসুখ তাহাকে আনন্দ দিয়াছে। দুঃখের অন্ধকারাচ্ছন্ন রাত্রিতেও ক্ষণতরে হইলেও বিধাতার দান আনন্দন্টুকু উপভোগ করিবার শক্তি তিনি রাখিয়াছেন । কমলার বিবাহের বর্ণনায় আমরা তাৎকালিক সমাজের যে চিত্ৰ পাইতেছি, তাহা কৌতুহলকর। ২৩ শত বৎসর পূর্বে পূর্ববঙ্গে বড় লোকের বিবাহে, নবদ্বীপ হইতে নাপিত আনা হইত, তাহারাই ‘গৌরচন্দ্ৰিক।” S\o