পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

So O বাংলার পুরনারী করা বামণ হইয়া চাদ ধরিতে যাওয়া, তুমি তোমার যোগ্য কোন নারীকে বিবাহ করিয়া সুখী হও ।” রাজকুমার বলেন, “তোমার বাড়ী হইতে যখন রাজবাড়ীতে ধৌত বাস আইসে, তখন আমার ধুতি চাদরে তোমার পাঁচটি আঙ্গুলের স্নিগ্ধ ও সুগন্ধ চিহ্ন আমি দেখিতে পাই, সেই দাগ দেখিয়া আমি আর আমাতে থাকি না । তোমার মালার গন্ধে সেই বস্ত্ৰ ভরপুর, আমি ঘুরিয়া ঘুরিয়া এই সকল নিদর্শন পাইয়া-তোমার জন্য পাগল হইয়া থাকি। এখানে তোমার সঙ্গে আমার বিবাহে অনেকে বাধা দিবে, তুমি যদি ইহাই মনে কর, তবে চল আমরা দুজনে এই রাজ্য হইতে চলিয়া যাই। কোকিল কেবল আমাদের রাজ্যে ডাকে না, ফুল কেবল এদেশের বাগানে ফোটে না, চাদের জ্যোৎস্না আর আর দেশে তাহার রজত জালে তরুগুল্মলতা গৃহাদি পরিশোভিত। করে, এদেশ হইতে আমরা দুজনে যাইয়া অন্য কোন দেশে কুটির বঁাধিয়া থাকিব,—এই সকল ফুল লতা ও পাখীর কৃজন আমাদের মিলন-মঙ্গল গান করিবে—তাহার তুলনায় রাজ্যসুখ আমার কাছে তুচ্ছ।” কাঞ্চন তাহার কৰ্ত্তব্য বুঝিতে পারিল না। একদিকে কুল মানের ভয়, অপরদিকে রাজকুমারের এতাদৃশ অনুরাগ-একদিকে তাহার চিত্ত ভয়ে দুরু দুরু করিয়া কঁাপিতেছে অপর দিকে অদৃষ্ট যেন তাহাকে কোন যাদুকরের রাজ্যের দিকে জোর করিয়া টানিতেছে। অবশেষে কাঞ্চন রাজকুমারের কথায় ভুলিল, রূপে ভুলিল এবং অনুরাগে ভুলিল। র্তাহারা উভয়ে নদীতীরে মিলিত হইতেন। তঁহাদের রাত্রি-ভোর আনন্দের কথা শত আশা ও ভবিষ্যৎ জীবনের স্বপ্নের কাহিনী শুনিতে শুনিতে রাত্ৰি প্ৰভাত হইয়া যাইত। রাত্রি জাগরণে ক্লান্ত রাজকুমার নদীর তীরে বঁাশপাতার বিছানায় ঘুমাইয়া পড়িতেন, কাঞ্চন ভাবিতেন “কি দূরদৃষ্ট আমার! যাহার শয্যা স্বর্ণ-পালঙ্ক, তিনি আমার জন্য এই কঠিন মৃত্তিকার উপর গাছ-পাতার বিছানায় পড়িয়া আছেন, এখুনি তো লোকের চলাচল হইবে। সারারাত্রি জাগিয়া দুইটি ক্লান্ত চক্ষু ঘুমে এই মাত্র বুজিয়া আসিয়াছে, আমি কেমন করিয়া ইহার কঁাচা ঘুম ভাঙ্গি, তথাপি না করিলে নয়”-কোমল হস্তে তাহাকে ঠেলিয়া উঠাইয়া দেন।