পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

夺t畔a NOS) বুড়ো ধোপা কঁাপিতে কঁাপিতে বাড়ীতে আসিয়া তাহার স্ত্রী অদুনাকে বলিল,-“কাঞ্চনকে আর কি করিয়া রাখা যায় ! পরের মেয়ের জন্য আমরা কি এই বয়সে অপমৃত্যু মরিব ?” অদুনা চোখের জল মুছিতে মুছিতে কাঞ্চনের কাছে যাইয়া তাহাকে বলিল, “মা, তুমি এক বছর এইখানে আছ, আমরা এই সময়ের মধ্যে তোমাকে ভালরূপই চিনিয়া তোমার মায়ায় ঠেকিয়াছি। কিন্তু এখন উপায় নাই। এদেশের দুরন্ত তসিলদার কি করিয়া যেন তোমার সন্ধান পাইয়াছে, এখন আর রক্ষা নাই। আমি তোমার ধৰ্ম্মের মা, তুমি সতী কন্যা ; আজ রাত্রের মধ্যে যদি তুমি আমাদের বাড়ী না ছাড়, তবে আমাদের সকলেরই ঘোর বিপদ। হে ঠাকুর । আজ রাত্রি আমাদিগকে রক্ষা কর।” পীৱিকান্দা গ্রামের তমসা গাজি তাহার পাঁচখানি ধান-বোঝাই জাহাজ লইয়া বাণিজ্য করে । উত্তর হইতে ধান ভাঙ্গাইয়া সে খোরাই নদীতে ভাগীদারের সঙ্গে চলিয়া যাইতেছিল। নদীর তীরে একটা ভাল জায়গা দেখিয়া সে পাঁচখানি ডিঙ্গি নোঙ্গর করিয়া ধান চালের হিসাব করিতেছে ও কোন স্থানে গেলে ব্যবসায় ভাল হইবে তাহার পরামর্শ করিতেছে, এমন সময় ভাগীদার জানাইল যে নদীর ঘাটে একটি অপূর্ব সুন্দরী কন্যা বসিয়া কঁাদিতেছে। তমসাগাজির কোন সন্তান ছিল না,-তাহার মন বাৎসল্যরসে ভরপুর ছিল। কন্যাটিকে সে যত্ন করিয়া তাহার ডিঙ্গিতে তুলিয়া उांन्व् ि। তমসাগাজির বাড়ীতে কাঞ্চন দিনরাত গৃহকৰ্ম্ম করে, যখন রাধিতে বসে, তখন দুই চক্ষের জলে তাহার শাড়ীর আঁচল ভিজিয়া যায়, উঠানে ঝাটি দেওয়ার সময়ে সে শোকাকুলা হইয়া অবসন্নভাবে পড়িয়া যায়, কখনও কখনও জল আনিতে নদীর ঘাটে যাইয়া অশ্রু দিয়া যেন বিনা সূতায় মালা গাথে। তাহার হাড়ভাঙ্গা খাটুনি দেখিয়া তমসাগাজি ও তাহার স্ত্রী তাহাকে এত পরিশ্রম করিতে নিষেধ করে ও তাহাকে কত সোহাগ ও মমতা দেয়, কিন্তু এই বিষন্ন প্ৰতিমা যে কি দুঃখে এরূপ কাতর থাকে, একবার হাসে না, কোন আমোদে যোগ দেয় না, কি দুঃখে যে সে এমন বিমনা হইয়া থাকেতাহা তমসাগাজি অথবা তাহার স্ত্রী কিছুই বুঝিতে পারে না।