পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ਰਟੈ। জয়চন্দ্র ও চন্দ্র-কৈশোরে অদূরে ফুল্লেশ্বরী নদী বহিয়া যাইতেছে ; পাডুড়িয়া পল্লী নদীর ধারে একখানি ছবির মত দাড়াইয়া আছে। এই পল্লীতে অনেক ব্ৰাহ্মণের বাস, সেইখানে একটি পুকুরের চারিধারে ফুলের বাগান, কত নাগেশ্বর, কুন্দ, জবা, মালতী ও চাঁপা ফুটিয়া আছে,-অতি প্ৰত্যুষে একটী মেয়ে ও একটি তরুণ যুবক সেই পুকুরপাড়ে ফুল তুলিতে আসে। একদিন সুন্দরী কুমারী বালককে জিজ্ঞাসা করিল, “কে তুমি ? তুমি তো আমাদের গায়ের লোক নও, তুমি রোজ আসিয়া ডাল ভাঙ্গ ও সকল ফুল তুলিয়া লইয়া যাও।” জয়চন্দ্ৰ বলিল “আমি তোমার গায়ের কেহ নহি, কিন্তু আমি দূরের লোক নাহি। তোমার গ্রাম ও আমাদের গ্রাম-এই নদীর দুই পারে।” দুইজনে আবার নীরবে ফুল তুলিতে লাগিল; চন্দ্রার সাজি জবা ফুল, গান্ধা, মল্লিকা ও মালতীতে ভৰ্ত্তি হইয়া যায় ; ক্রমশঃ তাহদের আলাপ একটু ঘনিষ্ঠ হইল, যে সকল ফুলগাছের ডাল উচু, চন্দ্ৰ হাতে পায় না, তাহা জয়চন্দ্ৰ নোয়াইয়া ধরে এবং চন্দ্ৰা অনায়াসে ফুল পাড়িয়া লইয়া যায়। “ডাল যে নোয়াইয়া ধরে জয়চন্দ্ৰ সাখী ।” একদিন চন্দ্রা একটি ফুলের মালা জয়চন্দ্রের গলায় পরাইয়া দিল এবং সেই হইতে চন্দ্ৰা রোজই একটি করিয়া মালতীর মালা গাঁথিয়া জয়চন্দ্ৰকে উপহার দেয়। চন্দ্রাবতীর পিতা বংশীদাস রোজ রোজ চন্দ্রার তােলা ফুলে শিবপূজা করেন । একদিন চােখের জলে সিক্ত করিয়া জয়চন্দ্ৰ চন্দ্রাকে পুষ্পাপত্রে অতি ংক্ষেপে একখানি চিঠি লিখিল, তাহাতে তাহার মনের কথা তাহাকে জানাইল -“আমি তোমার রূপে মুগ্ধ হইয়াছি, এইখানে ফুল তুলিতে আসি তোমার সঙ্গলাভের জন্য ; তুমি চলিয়া গেলে এই ফুলের বাগান আমার চোখে আধার হইয়া যায়।”