পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SS8 বাংলার পুরনারী নহে, সুখে-দুঃখে, আশা-উৎকণ্ঠায় সে চােখের জলে সেই স্মৃতির তর্পণ করে । বিবাহের উদ্যোগ ইহার মধ্যে বংশীদাসের বাড়ী একদিন এক ঘটক চন্দ্রাবতীয় বিবাহের একটা প্ৰস্তাব লইয়া আসিল । সে বংশী ভট্টাচাৰ্য্যকে বলিল, “আপনার কুল নিৰ্ম্মল, চন্দ্রের মত- এদেশে আপনার বংশের ন্যায় আর দ্বিতীয়টি নাই। আপনার কন্যা শুনিয়াছি, রূপে গুণে ধন্যা, বিদ্যাধরীর মত সে সুন্দরী । শুনিয়াছি তাহার বিবাহের যোগ্য বয়স হইয়াছে। আপনি আমাকে অনুমতি দিন, এই বিবাহের আমি ঘটকালি করি।” বংশী বলিলেন, “অবশ্য কোন বর আপনার মনে আছে, বলুন না সে কে, তাহার পরিচয় দিন !” ঘটক বলিল—“আপনি ঠিকই অনুমান করিয়াছেন, আমি একটা প্ৰস্তাব লইয়াই আসিয়াছি। ফুলেশ্বরীর অপর পারে সুন্ধা গ্রামের জয়চন্দ্ৰ চক্ৰবৰ্ত্তীর সঙ্গে চন্দ্রার সম্বন্ধের প্রস্তাব করিতেই আমি আসিয়াছি। তাহার কুল উচ্চ, আপনার বংশের সঙ্গে বেশ মিলিবে । আর আপনার কন্যা যেরূপ রূপবতী, জয়চন্দ্ৰও সেইরূপ রূপবান, দেখিতে সে কাৰ্ত্তিকের মত। তাহা ছাড়া সে অল্প বয়সেই শাস্ত্ৰবিৎ পণ্ডিত, “নানা শাস্ত্ৰ জানে বর অতি সুপণ্ডিত ” এই বরের সঙ্গে বিবাহ দিলে কন্যাটি সুখে থাকিবে, “কন্যা বরয়তি রূপং”, রূপে জয়চন্দ্র তরুণ সূৰ্য্যের ন্যায়। অন্যান্য কোন বিষয়েই সে খাট নহে। “শুভস্য শীঘ্ৰং” আপনার মনোনীত হইলে বিবাহে বিলম্ব করিবেন না । দেখুন, বসন্ত ঋতু দেখা দিয়াছে, আমের মুকুল মুঞ্জরিত হইয়া উঠিয়াছে, মাঝে মাঝে নূতন পাতা দেখা দিয়াছে, এখনও পশ্চিম হাওয়ায় গায়ে কঁাটা দেয়,-শীতকালের রেশটুকু এখনও ফুরায় নাই। মধ্য নদীতে ভাটা পড়িয়াছে, জলে টান ধরিয়াছে। এই বসন্তের আগমনে চারিদিকে যেন বাসর-শয্যা দেখা যাইতেছে, আপনি অনুমতি করিলে এই মাসেই একটা ভাল দিন স্থির করিতে পারা যায়।”