পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SSRV বাংলার পুরনারী একটি তরুণ যুবক হিজল গাছের মূলে বসিয়া চির-পিপাসিতের ন্যায় সেই রূপ-সুধা পান করিতেছে। একদিন সেই বসন্তের হাওয়ার মৰ্ম্মর শব্দে যখন নব পল্লব শোভিত, অশ্বখ গাছ যেন শিহরিয়া উঠিয়াছে, তখন যুবক একখানি পত্র লিখিয়া হিজল গাছের মূলে রাখিল, এবং পাগলের মত হিজল গাছকে সম্বোধন করিয়া বলিল, “ঢেউ পাড়ে আসিয়া আছাড় খাইয়া পড়ে, কিন্তু ফিরিয়া যাইয়া আবার সেই পাড়ে মাথা কুটে ; আমি এখন চলিয়া যাইব, কিন্তু মৰ্ম্মের বেদনা লইয়া, হে হিজল তরু, আবার তোমার কাছেই আসিব । এই সুন্দরী ললনা যখন এ পথ দিয়া যাইবে, তখন তোমার পত্র-কম্পনের শব্দে তাহাকে ইঙ্গিত করিও, তোমার ডালে বসিয়া যে সকল পাখী গান করে, তাহারা যেন ইসারা করে, পত্ৰখানি যেন সুন্দরীর দৃষ্টিগোচর হয় ;-তোমরা বুঝাইয়া বলিও, আমি তাহার জন্য আহার নিদ্রা ছাড়িয়াছি, আমার দুঃখের কথা তাহাকে বলিও ।” পরদিন পত্রের উত্তরের আশায় যুবক সেইখানে অতি প্ৰত্যুষে যাইয়া প্ৰতীক্ষা করিয়া রহিল :- “যেখানে ফুটেছে ফুল মালতী-মল্লিক, ফুট্যা আছে টগর বেলা আর শেফালিকা, হাতেতে ফুলের সাজি কপালে তিলক ছটা ফুল তুলিতে যায় কুমার মনে বিন্ধ্যা কাটা।” জয়চন্দ্রের প্রেমের এই দ্বিতীয় অধ্যায়-এদিকে বংশীদাসের বাড়ীতে তাহার বিবাহের বাজনা বাজিতেছে ও এয়োরা চন্দ্ৰাকে সাজাইয়া একখানি রূপের প্রতিমা করিয়া তুলিয়াছে। ঢোল ডগর বাজিতেছে। চতুর্দিকে হুলুধ্বনি, মেয়েরা মালা গাঁথিতেছে ও বিবাহের গান গাইতেছে, সমস্ত গৃহময় আনন্দের কলরব । এমন সময় জনরব এক দুঃসংবাদ ভাসাইয়া আনিল। আনন্দের কলরবে মুখরিত গৃহ সহসা স্তব্ধ হইয়া পড়িল ; বিবাহের গানের পরিবর্তে, বুক-ফাটা কান্নার রোল পড়িয়া গেল ; “কি হইয়াছে ?” “কি হইয়াছে ?” বলিয়া লোক জন