পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S\98 বাংলার পুরনারী সংসারের উদ্ধে আত্মার যে উচ্চস্থান পরিকল্পিত হয়-পল্লীগ্রামের গীতিকাগুলির কোথাও তাহার আভাস নাই। বৌদ্ধধৰ্ম্মে আত্মার অস্তিত্ব ও ঈশ্বরের বিশ্বাস স্থান পায় নাই, কিন্তু তাহাতে কৰ্ম্মফলের প্রতি খুব অতিরিক্ত মাত্রায় জোর দেওয়া আছে। গল্পগুলিতে বৌদ্ধ-প্ৰভাবের নিদর্শন অনেক আছে । এখানে তাহা আলোচনা করার প্রয়োজন নাই। চন্দ্রাবতীতে ব্ৰাহ্মণের আদর্শ রক্ষিত হইয়াছে, এই হিসাবে কুমারী চন্দ্রাবতী অপরাপর গল্পের নায়িকা হইতে একটু ভিন্ন প্রকারের। র্তাহার চরিত্রে আগাগোড়া ব্ৰাহ্মণ-কন্যার যোগ্য সংযমের দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়-অথচ তাহ শুষ্ক কাষ্ঠের মত নীরস নহে। একদিকে বাস্তব জগতের হৃদয়ােচ্ছিাস পূর্ণমাত্রায়— অপর দিকে তপস্যা-জনিত সংযম তাহার চরিত্রে মিশ্ৰ-সৌন্দৰ্য্যের চিত্র দেখাইতেছে । র্তাহার ভালবাসা খরতোয়া নদীর মত অতি বেগে চলিয়াছে ; কিন্তু অপরাপর পল্লী-চিত্রে সেই ভালবাসা যেরূপ অবাধ এবং শেষ পৰ্য্যন্ত সেই ভালবাসাই পূর্ণমাত্রায় প্রভাব বিস্তার করিয়াছে, এই গল্পে তাহা নহে। চন্দ্রাবতী ভালবাসার আবেগ প্ৰতি পদে বাধা মানিয়া চলিয়াছে, চঞ্চল হৃদয়ের আবেগ উচ্ছাস সর্বত্রই সংযম ও তপস্যার অধীন হইয়া प्रक्लिशांछि । ফল তুলিবার আগ্রহ, জলে সীতার কাটা, জয়চন্দ্রের গলায় ফুল মালা পরাইয়া দেওয়া ইত্যাদি ব্যাপারে চন্দ্রাবতীর মুক্ত হৃদয়ের সরল স্বাভাবিক গতি পরিদৃষ্ট হয় ; কিন্তু যে মুহুৰ্ত্তে জয়চন্দ্ৰ তাহাকে প্ৰেম নিবেদন করিয়া চিঠি লিখিল-সেই মুহুৰ্ত্ত হইতে তাহার নিজ হৃদয়ের প্রতি প্ৰথম দৃষ্টি পড়িল, সে সাবধান হইয়া গেল। যদিও সে মনে প্ৰাণে জয়চন্দ্রের অনুরাগী ছিল, এবং মনের নিভৃত কোণে - যে দেবতার দৃষ্টি, সেই দেবতাকে তাহার মনের আকাঙ্ক্ষা নিবেদন করিতে কুষ্ঠিত হইল না,-তথাপি বাহিরে সে সতর্ক হইয়া গেল। এই সতর্কতা, এই সংযম সে জোর করিয়া আনে নাই। বিশুদ্ধ ব্ৰাহ্মণ-বংশের শোণিতে ইহার অস্তিত্ব বিদ্যমান। চন্দ্রাবতী যে দিন প্ৰথম প্ৰণয় চিঠিখানি পাইল সেই দিন হইতেই ফুলেশ্বরী নদীর পারে ফলে কুড়াইতে যাওয়া ছাড়িয়া দিল। চিঠি পাইয়া সে একবার দুঃখ প্ৰকাশ