পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চন্দ্ৰাবতী SNOd করিয়া বলিয়াছিল,-“এ কি করিলে, তোমার মুখখানি দেখার সুযোগ হইতে আমাকে বঞ্চিত করিলে ?” তদবধি সে নিজের আঙ্গিনায় যে সকল জবা, নাগেশ্বর, চাপা ও গান্ধা ফুটিত, তাহাই কুড়াইয়া পিতার পূজার আয়োজন করিতে লাগিল। জয়চন্দ্রের সঙ্গে দেখা শুনা সমস্তই বন্ধ হইয়া গেল। এই সংযম তাহার চরিত্রের বিশেষত্ব। জয়চন্দ্রের পত্রের উত্তরে সে দুইটি ছত্ৰ মাত্র লিখিল । তাহার হৃদয়ের প্ৰবল উচ্ছাসের কোন কিছু তাহাতে ছিল না, অপূর্ব সংযম-সাবধানতায় সে পত্ৰখানি লিখিয়াছিল, “আমি কি জানি ? আমার পিতা আছেন, তিনিই কৰ্ত্তা।” এই সংক্ষিপ্ত উত্তরের ভিতর তাহার হৃদয়ের বেগবতী। ভালবাসার একটি ঢেউ আসিয়া পড়ে নাই। তাহা সংযত-শীলতার পরিচায়ক । প্রথম লিপি পাইয়া সে তৎক্ষণাৎ কোন কৌতুহল প্ৰকাশ করে নাই, অপর কোন নায়িকা হৃদয়ের অদম্য আবেগে তখনই পত্ৰ পড়িবার জন্য উৎসুক হইত। কিন্তু চন্দ্ৰা পত্ৰখানি আঁচলে বাঁধিয়া ফুলগুলি সংগ্ৰহ করিল, পিতার ঠাকুর-ঘরখানি মার্জনা করিল, পুষ্পপাত্রে আহৃত ফলগুলি সাজাইয়া রাখিল, পিতার জন্য আসন *াতিল ও চন্দন ঘষিল । বংশীদাস পুজোপকরণের পার্শ্বে আসনে আসিয়া চোখ বুজিয়া ধ্যানে বসিলেন, তখন চন্দ্ৰ নিজ কক্ষে যাইয়া চিঠিখানি পড়িতে বসিল । অথচ তাহার মনে যে কৌতুহল ও পিপাসা জাগিয়াছিল, তাহা অতি প্ৰবল। সর্বত্রই চন্দ্ৰা রমণী-জনোচিত, ব্ৰাহ্মণ কন্যার শোণিতের বিশুদ্ধতাজনিত সংযমের পরাকাষ্ঠা দেখাইয়া আসিয়াছে—তাহ কষ্ট-কৃত নহে, স্বভাবই তাহাকে এই সংযম চরিত্রের ভূষণ স্বরূপ গড়িয়া দিয়াছিলেন। যে দিন ভয়ানক বিপদের সংবাদ আসিল,-কোথায় রাম রাজা হইবেন, র্তাহাকে বনবাসী হইতে হইল, তখনকার চন্দ্রার চিত্র অতি অপূৰ্ব্ব । চারিদিকে কান্নাকাটি,-আৰ্ত্তনাদ, কিন্তু যাহার মাথায় বাজ পড়িয়াছে,-সে। একেবারে নিশ্চল ও অবিচলিত । অথচ তাহার প্ৰেমে-স্বাভাবিক দুঃখ-বোধ ও নিরাশার ভাবের এক বিন্দুও ব্যত্যয় হয় নাই, তাঙ্গার - চিত্র তখন মৌন