পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রূপবতী S8N) রাজার গৃহে ফেরা ও উদাসীনের ভাব কন্যার বিবাহ সম্বন্ধে চেষ্টা করিবার জন্য রাজা জয়চন্দ্ৰ স্বীয় রাজধানীতে ফিরিয়া আসিয়াছেন। কিন্তু এবার তাহার সম্পূর্ণ ভাবান্তর দেখিয়া রাণী বিস্মিত হইলেন। রাজা সারারাত্রি বিছানায় উঠা-বসা করেন, এক মুহুৰ্ত্ত ঘুমান না ; কি ভাবিয়া দীর্ঘনিশ্বাস ফেলেন এবং নিতান্ত নিরাশ্রয়ের মত একদিকে চাহিয়া থাকেন, কোন কথা বলেন না। রাণী একদিন তঁহাকে বলিলেন-“তুমি এবার এমন হইয়া গিয়াছ কেন ? এতদিনের পর বাড়ী আসিলে, আমার সঙ্গেও একটিবার কথা বলিতে ইচ্ছা হয় না। প্ৰাণের দুলালী কন্যা, সে তোমার চক্ষের বিষ হইয়াছে, তাহাকে তুমি ডাকিয়া একটি কথা জিজ্ঞাসা কর না। সোণার বাটাতে পান, চুয়া, কেওয়ার খয়ের ও সুগন্ধী সুপরি পড়িয়া থাকে, তুমি একটি পান খাও না। সরু সুগন্ধি চালের ভাত সোনার থালায় পড়িয়া থাকে, তুমি হাত দিয়া নাড়াচাড়া কর, একটি দানা তোমার পেটে যায় না । তোমার কি হইয়াছে ? যদি তুমি আমার সঙ্গে এরূপ ব্যবহার কর, তবে আমার মৃত্যুই মঙ্গল। এতবড় মেয়ে-তুমি তাহার বিবাহের কথা ব’ল না ।” রাজা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলিয়া বলিলেন, “রাণী, আমার প্রতি নিষ্ঠুর হইও না, আমি মরণে মরিয়া আছি। শত শত বিছা, হাঙ্গর, কুমীর যেন আমায় কাটিয়া ফেলিতেছে, আমি যন্ত্রণা সহ্যু করিতে পারিতেছি না। কেহ যেন শেল দিয়া আমার বুক চিরিয়া ফেলিতেছে। “কুক্ষণে তুমি আমায় চিঠি লিখিয়াছিলে, আমি সেই চিঠি হাতে করিয়া দরবারে বিদায় চাহিতে গিয়াছিলাম। নবাব চিঠি পড়িয়া বলিলেন, “হা হে রায় ! তোমার তো বয়স্থা এক কন্যা আছে । শুনিয়াছি সে নাকি পরম সুন্দরী, আমার সহিত তাহার বিবাহ দাও । তোমার সবদিক দিয়াই সুবিধা হইবে। আমার পূজনীয় আত্মীয় বলিয়া দরবারে তোমার প্রথম স্থান হইবে, তুমি বড় খেতাব পাইবে। দরবারে তুমি আমার ছালাম পাইবে, কত বড় সম্মান ভাবিয়া দেখ। তুমি শীঘ্ৰ তোমার বাড়ী চলিয়া যাও, আমি এদিকে বিবাহের উদ্যোগ করিতে থাকি।”