পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রূপবতী S80 এই যুবককে রাণী ডাকাইয়া আনিলেন, সে চক্ষু মাটির দিকে নত করিয়া দাড়াইল । রাণী বলিলেন, “রাত দুপুরে তোমাকে দিয়া আমার কাজ আছে, তুমি হাজির থাকিও।” রাণী সন্ধ্যার পর আহারাদি সারিয়া যখন র্তাহার কন্যা রূপবতী ঘুমাইয়া পড়িয়াছেন, তখন শীতল মন্দিরে রাজকুমারীর কক্ষে যাইয়া তাহার শিয়রে বসিলেন ; তাহার চোখের ফোটা ফোটা জল রূপবতীর গায়ে পড়িতে লাগিল, কুমারী জাগ্রত হইয়া উঠিয়া বসিলেন ; মায়ের কান্না দেখিয়া তঁহারও কান্না পাইল। তিনি বলিলেন, “এমন কি ঘটিয়াছে, যাহাতে তুমি এত দুঃখ পাইয়াছ ? আমি কি কোন অপরাধ করিয়া তোমার মনে ব্যথা দিয়াছি ?” রাণী বলিলেন, “কোন অপরাধ তুমি কর নাই ; তোমার, আমার ও রাজার কপালের দোষ-আমার নগরে আগুন লাগিয়াছে, শীতল মন্দির পুড়িয়া ছাই হইবে। আমার আদরিণী কুমারী, আজ তোমার সঙ্গে আমার শেষ দেখা, বিদায় লইতে আসিয়াছি।” অস্পষ্ট, অব্যক্ত, এক গুরুতর আশঙ্কায় রূপবতীর হৃদয় কঁাপিতে লাগিল ; কিছু না বুঝিয়া না শুনিয়া মাতা ও কন্যা গলা জড়ােজড়ি করিয়া পরস্পরকে ধরিয়া কঁাদিতে লাগিলেন । গভীর রাত্রে কোন হুলুধ্বনি হইল না, এ দুয়ারা আসিয়া স্ত্রী-আচার করিল না, অন্তঃপুরিকার ফুলের মালা গাঁথিতে বা চন্দন ঘষিতে বসিল না। মাতা পাড়াপাড়সীদের কাছে সোহাগ মাগিতে গেলেন না, পুরনারীরা আভু্যদিকের জন্য ইট কাটিতে গেল না। চােরাপানীর জলে বরকনের কৌতুকপূৰ্ণ খেলা হইল না ; পুরোহিত আসিয়া মঙ্গলাচরণপূর্বক বিবাহের ধৰ্ম্মানুষ্ঠানে প্ৰবৃত্ত হইলেন না । মঙ্গল-ঘট নাই, বরণডালা নাই—বাদ্যভাণ্ড নাই। মদন মধ্যরাত্রে রাণীমাতার কাছে আসিয়া দাড়াইল । রাণী আশীৰ্ব্বাদের একটি কথা বলিলেন না,—তাহার দুই চক্ষু হইতে জল পড়িতে লাগিল। রূপবতী সজলচক্ষু মাটিতে নত করিয়া মৌন হইয়া দাড়াইয়া রহিলেন । মদনের বুক দুরু দুরু করিয়া কঁপিয়া উঠিল, ব্যাপার কি সম্যক বুঝিতে না পারিয়া মদন রাণীর নির্দেশমত সেই কাঞ্চন-প্ৰতিমার কাছে আসিয়া দাড়াইল । রাণী বলিলেন, “এই বংশের একমাত্ৰ প্ৰদীপ-এই দুলালী কন্যাকে মদন, আমি তোমার হাতে সমৰ্পণ করিলাম ; আকাশের তারা সাক্ষী, Sh