পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রূপবর্তী S8S কাঙ্গালিয়া ইহাদিগকে বাড়ীতে লইয়া আসিয়া পুনাইকে ডাকিয়া বলিল, “আজ সারাদিনে কোন মাছ পাই নাই, কিন্তু আসিয়া দেখা কি আনিয়াছি।” রূপবতীকে দেখিয়া বিস্মিতা পুনাই স্বামীকে বলিল, “এ যে দেখিতেছি, নদীর জল হইতে লক্ষ্মী-প্ৰতিমা আনিয়াছ।” বহুদিন যে কামনা হৃদয়ে পুষিয়াছিল, সেই বাৎসল্যরস পূর্ণ করিতে দেবতা যেন এই দেবী-মূৰ্ত্তি পাঠাইয়া দিয়াছেন। কত স্নেহে পুনাই রূপবতীকে তাহার বাড়ী ঘর সম্বন্ধে, নানা প্রশ্ন করিল, কি জন্য নদীর তটে নির্জনে কঁাদিতেছিল এবং সঙ্গের সুদৰ্শন পুরুষই বা কে ? ইত্যাদি জিজ্ঞাসা করিতে লাগিল । লজ্জিত রূপবতীর গণ্ডদ্বয় আরক্ত হইল, সে কথা খুব অল্পই বলিল, কিন্তু তাহার চোখের জলই যেন সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিল । পুনাই বলিল, “প্রশ্ন করিলে যদি কষ্ট পাও, তবে উত্তর চাই না। রত্নবোঝাই নৌকা যদি দেবতার ইচ্ছায় ঘাটে লাগে—তবে কে আর তার কৈফিয়ৎ লইবার জন্য প্ৰতীক্ষা করে? আমার ঘরে পুত্ৰ-কন্যা নাই--তোমরাই আজ হইতে এই ঘরের পুত্ৰ-কন্যা হইলে ।” মদনের বিদায় গ্ৰহণ সেই দিন প্ৰাতে উষার আলো পূব দিক হইতে সবে ঝিলি মিলি খেলিতেছে, স্বামী আসিয়া রূপবতীকে বলিলেন, “আজ ছয় বৎসর তোমাদের বাড়ীতে কাটাইলাম। একদিনও দেশে যাই নাই, আমার পিতা-মাতা কেমন আছেন, তাহা জানি না। তুমি অনুমতি দিলে আমি কয়েকটা দিনের জন্য দেশে যাইতে পারি।” অনেক কান্নাকাটির পর রূপবতী স্বামীকে বিদায় দিলেন। স্বামী বলিয়া গেলেন “৮১০ দিনের মধ্যে নিশ্চয়ই আসিব ।”