পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ge বাংলার পুরনারী ৮১০ দিন চলিয়া গেল। জেলে বাড়ীর মরা কুলগাছের ডালটার উপর বসিয়া কোকিল ডাকিয়া ডাকিয়া হয়রান হইল, নদীর ওপার হইতে ডাহুক পাখী সারারাত্রি চীৎকার করিয়া আকাশ ফাটাইয়া দিল,-কিন্তু কই কেউ ত সাড়া দিল না। রূপবতীর প্রাণ যে অহৰ্নিশ সেইরূপ। চীৎকার করিয়া উঠে, মরা চাঁদ ধীরে ধীরে পূর্ণ জীবিত হইতে লাগিল। রূপবতীর হাতের বকুল-মালা রোজই শুকাইয়া যায়, কাজল-বরণ ভ্ৰমরেরা তাহার কাছে ছোট ছোট ফুলের চারিদিকে ঘুরিয়া গুণ গুণ করে,- রূপবতী যাহা দেখেন, যাহা শুনেন, তাহাতেই মন উতলা হইয়া উঠে। দুটা পক্ষ চলিয়া যায়। এখনও ত মদন আসিল না, রূপবতীর আহারের রুচি চলিয়া গেল, রাত্ৰিতে এক মুহুর্তের জন্য চােখে ঘুম মাই-মনে সদাই মদনের জন্য হাহাকার হইতে লাগিল। তিনি কাহার কাছে তঁহার দুঃখের কথা বলিবেন ? পুনাই যত সোহাগ করে, তাহাতে মুখে বাহিরে একটা হাসির রেখা খেলিয়া যায়, কিন্তু চোখে অশ্রু টলমল করে । নিষ্ঠর সংবাদ ও পুণাইএর অভিযান একদিন রূপবতী কি নিদারুণ সংবাদই না শুনিলেন, তঁাহার। আছাড়িবিছাড়ি ক্ৰন্দনে পুনাইর, প্ৰাণ ফাটিয়া যাইতে লাগিল। দেশের রাজা ডঙ্কা দিয়াছেন, “রাজকুমারী পলায়ন করিয়াছে, মদন নামক তাহার এক কৰ্ম্মচারী তাহাকে লইয়া পলাইয়া গিয়াছে। যে সেই মদন ও রাজকুমারী রূপবতীকে ধরিয়া দিতে পরিবে তাহাকে বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হইবে। অপরাধী মদনকে কালী মন্দিরে বলি দেওয়া হইবে।” যে এই সংবাদ দিল, সে বলিল “এই মদনই কাঙ্গালিয়া ও জঙ্গলিয়াদের বাড়ীতে ছিল, রাজার লোকজন তাহাকে ধরিয়া লইয়া গিয়াছে। রাজা তাহাকে মৃত্যুদণ্ড দিবেন, কুমারীর খোজেও লোকজন ঘুরিতেছে।” এইভাবে সমস্ত কথাই প্ৰকাশ হইয়া পড়িল ।