পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রূপবতী Głół “আমি ৬ বৎসর যাবৎ মহারাজার বাড়ীতে কাজ করিতেছি এবং আমি অন্দর বাড়ীতে সৰ্ব্বদা যাতায়াত করিয়া থাকি, মহারাজার কোন প্ৰয়োজন হইতে পারে-- এইজন্য আদেশ প্রতীক্ষায় আমি এখানে আছি।” রাজা মনে মনে কতকটা খুন্সীই হইয়াছিলেন, কারণ পদ ও জাতি হিসাবে অযোগ্য হইলেও মদনের অনেক গুণ ছিল । সুতরাং নিতান্ত বিপদে পড়িয়া এরূপ লোকের হস্তে রূপবতীকে সমৰ্পণ করা বরং কতকটা ভাল, এইজন্য ভূত্যের অসময়ে তথায় উপস্থিতির প্রশ্ন লইয়া কালক্ষয় ও লোক জানাজানির সুবিধা না দিয়া রাজা পরদিন রূপবতীর সঙ্গে মদনের বিবাহের ঘোষণা করিয়া দিলেন । পালাটির এই অংশ নিতান্তই অবিশ্বাস্য। বহু পূর্ব হইতে এরূপ অনেক রূপকথা এদেশে প্রচলিত আছে যে, মুস্কিলে পড়িয়া রাজা প্ৰতিজ্ঞা করিয়া বসিয়াছেন, “কাল সকালে উঠিয়া যাহার মুখ প্ৰথম দেখিব, তাহার সহিত আমার কন্যার বিবাহ দিব।” এই চির-প্ৰচলিত রূপকথার অংশ কাহিনীটিতে জুড়িয়া দেওয়া হইয়াছে বলিয়া আমার মনে হয়, এই জোড়া খুব বেমালুম রিপু-কাৰ্য্য হয় নাই। রাজা ঢাক-ঢোল বাজাইয়া মদনের সঙ্গে তাহার কন্যার বিবাহ দিলেন। জানাজানি হইল, সুতরাং মুর্শিদাবাদের রোষাগ্নি তাহাতে নির্বাপিত হইবার কথা নহে, বরং বিপদ তো সমস্তই রহিয়া গেল, কেবল কন্যাটিকে একটি অপাত্ৰে দান করা হইল। তদপেক্ষ অপর পালাটির কথিত অংশ বিচারসহ ও সঙ্গত বলিয়া মনে হয়। তাহা আমার এই গল্পে দেওয়া হইয়াছে, ময়মনসিংহ গীতিকায় দুইটির অংশই দেওয়া হইয়াছে। এই গল্পে প্ৰদত্ত ঘটনা অনুসারে রাণী স্বয়ং রাজার নিকটও বিষয়টি গোপন রাখিয়া দ্বিপ্রহর রাত্রে মদনের হাতে রূপবতীকে দিলেন, “কাণা চৈতা”কে (নৌকার মাঝি ) বলা হইল সে যেন তাহার নৌকার যাত্রী দুইজন সম্বন্ধে কোনওরূপ কৌতুহল না দেখায়, এবং তাহারা কে এবং কোথায় যাইতেছে প্ৰভৃতি না জিজ্ঞাসা করিয়া নদীর চৌদ্দ বঁাক পরে যে স্থান পাইবে, তাহা লোকালয় হউক, বা বিজন বনই হউক।-সে সম্বন্ধে বিচার না করিয়া অতি প্ৰত্যুষে ইহাদিগকে সেই স্থানে নামাইয়া দিয়া ফিরিয়া আসে।