পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বরূপবর্তী Sዕሞ গুণপণার টের পাওয়া যায় নাই। হিন্দু পরিবারের কুমারীরা অনেক সময়েই মাটীর পুতুলের মত, তাহাদের মনোবৃত্তি সৰ্ব্বংসহা ; যে পৰ্যন্ত ভাঙ্গিয়া না যায়—সে পৰ্য্যন্ত সকল অবস্থার সঙ্গেই তাহ নিজকে মানাইয়া চলিতে পারে। তাহার গভীর মনোবেদনা বা চাঞ্চল্য সহজে বুঝা যায় না, গভীর কূপের মত তাহা নিয়ে অজস্ৰ জল-সঞ্চয় ধারণ করিয়াও বাহিরের সল্প পরিসর উপরিভাগে সেই গভীরতার কোন লক্ষণই দেখায় না । , কিন্তু যেদিন স্বামীর বিপদের কথা রাজকুমারী শুনিল, সেদিন তাহার চিত্তের সমস্ত কারুণ্য ও ভালবাসা যেন উৎসারিত হইয়া উঠিল ; এই সুকুমারী নব বধূটর মনে যে নীরবে কত রস-ধারা সঞ্চিত ছিল তাহার গোপন আশা ও আকাজক্ষার কথা সেইদিন বাহির হইয়া পড়িল । তাহার বড় সাধ ছিল সে শীতল-পাটি পাতিয়া স্বামীর সঙ্গ-সুখ লাভ করে, ঘিয়ের বাতি জ্বালাইয়া সারারাত্ৰি তাহার চন্দ্ৰমুখখানি দেখিয়া কাটায়,-প্ৰতি প্ৰভাতে শিবপূজার ফুলের মত বাগানের ফুল কুড়াইয়া স্বামীর জন্য মালা গাথে এবং নিজে উৎকৃষ্ট শালী ধানের ভাত রাধিয়া উষ্ণ ধোয়া থাকিতে থাকিতে তাহা পরিবেশন করিয়া কাছে বসাইয়া খাওয়ায়— সে রাজবাড়ীর স্বর্ণ পালঙ্ক, মণি মুক্তার অলঙ্কার, হাতী ঘোড়া যান-বাহন, স্বর্ণ রৌপ্যমণ্ডিত জলটুঙ্গী ঘর বা আরাম গৃহ-এসকল কিছুরই আকাঙ্ক্ষা করে নাই, কিন্তু হিন্দু বধূদের নিভৃত হৃদয়ের যে সকল যাম্রজ্ঞা জানাইয়াছে, তাহা এদেশের রাজবাড়ীতে সাম্রাজ্ঞী হইতে কুটীরবাসিনী সকল রমণীরই অতিপ্ৰাৰ্থিত ; এই অধ্যায়ে রূপবতী বঙ্গের বন্ধুরূপে ধরা দিয়াছে। দ্বিতীয় চরিত্র পুণাইএর,-তাহার হৃদয়ে রূপবতীর জন্য যে কি অসামান্য গ্ৰীতি ছিল, তাহা রাজবাড়ীতে তাহার ক্ষেন্দোক্তিতে বুঝা যায়। দরবারের সশস্ত্র সৈন্য ও দেহরক্ষী দলের বিভীষিকা এবং সভাসদগণের উগ্ৰ প্ৰশ্ন-জিজ্ঞাসা কিছুতেই সে ভড়কাইয়া যায় নাই, বরং রাজার প্রতি ক্ৰোধ-প্রবণা মুখরা কলহকারিণীর মনের ক্ষোভ গ্ৰাম্য ভাষায়ই সে ব্যক্তি