পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SS বাংলার পুরনারী তুমি যেমন কৰ্ম্ম করিবে, তেমনই ফল পাইবে, তাহা কিছুতেই উল্টাইবে না। এই অলজঘ্য কৰ্ম্মতরুর ফলই মানুষকে জন্মে জন্মে ভোগ করিতে হয় ; প্ৰত্যেক ঘটনাই মানুষের কৰ্ম্মের অধীন। এই জন্য কৰ্ম্মপুরুষই মানুষের ভাগ্যের নিয়ন্ত । মানুষের গুণের মধ্যে ত্যাগ, স্বার্থবিজর্জন, আতিথ্য, পরার্থপরতা প্ৰভৃতিই বৌদ্ধযুগের প্রধান ধৰ্ম্ম। এই সকল গুণের ব্যত্যয় হইলে তাহার ফল অবশ্যম্ভাবী। যদি কেহ অতিথিকে রিক্ত হস্তে ফিরাইয়া দেয়, আৰ্ত্তের সেবা না করে, তবে তাহার শাস্তি কেহ খণ্ডন করিতে পরিবে না । গল্পের সর্বত্ৰ কৰ্ম্মপুরুষের রাজত্ব । আতিথ্যের নিয়ম লঙ্ঘন করাতে রাজাকে বার বৎসরের জন্য নির্বাসন শাস্তি ভোগ করিতে হইয়াছিল। এখানেও সেই “তেঠেঙ্গা দেবতা” শাস্তি ঘোষণা করিলেন । সুলারাণীর রূপ যখন র্তাহার ভয়ের কারণ হইল, তখন তিনি কৰ্ম্মপুরুষের নিকটই কুণ্ঠরোগ প্রার্থনা করিয়া সেই বর পাইলেন । দ্বাদশ বৎসরান্তে সেই কৰ্ম্মপুরুষই তাহার শাস্তির শেষ ঘোষণা করিয়া পুরস্কার দান করিলেন। সর্বত্র কৰ্ম্মেরই জয়-জয়কার, এবং তদধিষ্ঠিত দেবতা কৰ্ম্মপুরুষের আবির্ভাব ও তিরোভাব । আমরা মালঞ্চমালার গল্পে ‘ধাতা-কাতা-বিধাতা’র উল্লেখ পাইয়াছি ; ইহার কে, তাহার কোন নিশ্চয় পরিচয় নাই, কিন্তু ইহারা যে সেই “তেঠেঙ্গা দেবতার”ই স্বগণ, তাহা স্পষ্টই বোঝা যায় ; এই গল্পেও সেই ধাতা-কাতাবিধাতার উল্লেখ আছে। এই সকল গল্প কেহ অবশ্য ইতিহাসের পর্য্যায়ে ফেলিবেন না। ইহারা নিছক গল্প, এবং সেই হিসাবেই ইহাদের মূল্য। তথাপি কাল্পনিক উপাখ্যানগুলিও সময়োচিত ভাব ও পরিবেষ্টনীর মধ্যেই পরিকল্পিত হয়। যে সময়ে ইহার রচিত হইয়াছিল তখন নর-নারীদের দেহ সবল ও মন নৈতিক শক্তিসম্পন্ন ছিল। তঁহারা বাতাসে হেলিয়া পড়িতেন না, দুঃখে কষ্টে ভাঙ্গিয়া পড়িতেন না, সৎকাৰ্য্য ও আত্মদানের কোন ব্যাপারেই তঁাহারা কুষ্ঠা বোধ করিতেন না। এই সকল গানের সকল স্থানেই পুরুষাকারের জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত আছে। গল্পের রাজা একটা সামান্য ভিক্ষুকের প্রার্থনায় নিজের চক্ষু উপড়াইয়া ফেলিতেছেন। আত্মরক্ষার জন্য নারী কুণ্ঠ রোগকে বরণ করিতেছেন,