পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তিলক বসন্ত SynO স্বীয় প্ৰতিশ্রুতির গৌরব রক্ষা করিয়া রাজা নিজের কন্যাকে একটা মালীর হাতে অৰ্পণ করিতেছেন ; এ সমস্ত এক হিসাবে গাঁজাখুরী গল্প বলা যাইতে পারে। কিন্তু দিকদৰ্শন যন্ত্রের আর একটা দিক উণ্টাইয়া ধরিলে বুঝিতে পারা যাইবে যে এই গল্পগুলির ভিতরকার একটা বড় কথা আছে, তাহা লক্ষ্য করা পাঠকের উচিত। এই ধরণের যত গুলি গল্প আছে, তাহার অনেকগুলিরই প্ৰধান ভিত্তি আদর্শ-বাদ । শিশুর কৌতুহল নিবারণোপযোগী বাহিরের সাজ-সজ্জা, শিশু ভিন্ন অন্য কেহ যাহা বিশ্বাস করিতে পারে না, এমন সকল অলৌকিক ত্যাগ-মূলক ঘটনা, কিন্তু তাহারা একটি দিকে নিশ্চিত ভাবে ইঙ্গিত করিতেছে। “দাতা কণ’ গল্পে পিতা-মাতা করাত ধরিয়া নিজেদের একমাত্র পুত্রের শির-কৰ্ত্তন করিতেছেন, সেই মাংসে ব্ৰাহ্মণ অতিথিকে তৃপ্ত করিবার জন্য। বাঙ্গালা দেশের কাঞ্চনমালা, মালঞ্চমালা প্ৰভৃতি এইরূপ শত শত গল্পে ত্যাগের মহিমা প্রচারিত হইয়াছে, তাহা অত্যাশ্চৰ্য্য, অবিশ্বাস্য ও অলৌকিক। বৌদ্ধজাতকেও ত্যাগের সেইরূপ উদাহরণ অনেকস্থলে পাওয়া যায়। সে যুগ ছিল বৌদ্ধদিগের ত্যাগের শিলমোহর মারা । মানুষ যাহা হিত মনে করিয়াছে, যে করিয়া হউক তাহা করিবেই। আদর্শকে এত বড় করিয়া আঁকিয়াছে যে তাহার উপহাসাম্পদ বাড়াবাড়ির উপরও সে গুরুত্ব দিয়াছে, অকুষ্ঠিত ভাবে তাহা অনুসরণ করিয়াছে ; এই ঘটনাগুলি মানুষকে দেবতার পংক্তিতে লইয়া যাইবার আপ্ৰাণ চেষ্টায় কল্পিত । মানুষের সঙ্গে মানুষের প্রভেদ তখনও এত বেশী হয় নাই যে তাহাতে ভদ্র, ধনী ও ইতর শ্রেণীর সঙ্গে ঘনিষ্ট ভাবের মিলন অসম্ভব হইতে পারে। রাজা সিংহাসন ছাড়িয়া কুড়ুল কঁাধে করিয়া বনে কাঠ কাটিতে চলিতেছেন ; সেই কাঠুরিয়াদের মধ্যে কাঠুরিয়ার জীবন বহন করিতেছেন, রাণীর সহচরীরাও সেই শ্রেণীর। কিন্তু এই পদমৰ্য্যাদার প্রভেদ মানুষকে মানুষের পর করিয়া দেয় নাই। সংস্কার, অভ্যাস এবং গর্ব মানুষকে একটা পৃথক শ্রেণীর জীবে পরিণত করিতে পারে নাই-যেখানে, যে অবস্থার ফেরে। ইহারা পড়িয়াছেন,-মানুষ মানুষই আছেন—ৰ্তাহারা কৃত্রিম রেখা টানিয়া একেবারে লৌহ-কঠোর গণ্ডীবদ্ধ হইয়া যান নাই।