পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Str8 বাংলার পুরনারী কাঠুরিয়াদের সরল জীবন ও তাঁহাদের মনের ভাবের যে পরিচয় আছে, তাহা অল্প কথায় কি সুন্দর ভাবে প্ৰকাশ পাইয়াছে!! রাজা ও রাণীর প্রতি তাহাদের কত দরদ, তাহাদের প্রত্যেকেই রাজা ও রাণীর তুষ্টি সাধনার্থ কোন না কোন কিছু করিতেছে,-রাজাকে হারাইয়া তাহারা “আমাদের পাগল রাজা গেল কোথাকারে” বলিয়া যে চীৎকার করিয়া কঁাদিয়াছিল, —তাহা মৰ্ম্মভেদী। এই সরল কাঠুরিয়া জীবনের যে চিত্র কবি দিয়াছেন, তাহা বড়ই সুন্দর ও মৰ্ম্মান্তিক হইয়াছে। এই রাজার বনবাস, অন্ধত্ব বরণ, রাণীর দুঃসাধ্য ব্যাধি গ্ৰহণ, এবং নানা অবস্থান্তরের আজগুবী ব্যাপারের মধ্যে স্বর্ণ পদ্মের মত রাজা-রাণীর যে দুইটি চরিত্ৰ ফুটিয়া উঠিয়াছে, তাহা মেঘাবৃত আকাশে তড়িৎ রেখার ন্যায় আমাদের চক্ষু ঝলসিয়া দেয়। এই গল্প যে যুগের, সে যুগে এদেশের মানুষের সাহসের অন্ত ছিল না, কষ্ট-সহিষ্ণুতার অবধি ছিল না, মহত্বের ও বীৰ্যবিত্তার শেষ ছিল না। এগুলি ঠিক রাক্ষস খোক্কোসের গল্পের মতন নহে,--- ইহাদের শৌৰ্য-বীৰ্য্য ও চরিত্ৰবল কাল্পনিক সাজ-সজ্জায় উপস্থিত করা হইয়াছে সত্য, কিন্তু তাঁহাদের ভিত্তিমূলে জাতীয় চরিত্রের মহৎ কতকগুলি গুণের উপাদান আছে, যাহা সৰ্ব্বকালীন সত্যের উপর ७थउिछेिऊ । এই গানটিতে যে প্রেমের সুরটি পাওয়া যায় তাহা চণ্ডীদাস-পূর্ব সহজিয়াদের সুর। মনে হয়, যে খনি হইতে বৈষ্ণবদের আদি কবি র্তাহার ভাবরত্ন আহরণ করিয়াছিলেন, এই পালা গানের কবিও সেই খনির সন্ধান পাইয়াছিলেন। চণ্ডীদাসের প্ৰেমে যে আধ্যাত্মিকতা আছে, পালা গানে তাহা নাই। পালা গানের প্ৰেম খুব উচ্চগ্রামের—কিন্তু তাহা বাস্তব জগতের, তাহাতে কুল-শীল-মান হইতে মানব আত্মাকে টানিয়া উৰ্দ্ধতম লোকে লইয়া যায় না ; কিন্তু ইহ জগতের সার বস্তু প্রেমকে বাস্তবতার আলোকেই চিনাইয়া দেয়। উভয় শ্রেণীর কবি যে একই জাতীয় ভাণ্ডার লুট করিয়াছেন, তাহার প্রমাণ অতি স্পষ্ট। চণ্ডীদাস লিখিয়াছেন, “সুখ দুঃখ দু'টি ভাই, সুখের লাগিয়া যে করিবে আশ-দুঃখ যাবে তার ঠাই।” এই গল্পের কবি লিখিয়াছেন