পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

〉b" বাংলার পুরনারী মল্লিকার ন্যায় তাহদের সেই ভাষা আত্মদানের সুরভি-মাখা । বৈষ্ণব কবিরা এবং গ্ৰাম্য গীতিকারেরা উভয়েই সে ভাণ্ডারের সন্ধান পাইয়াছিলেন, -পান নাই সংস্কৃতের পণ্ডিতেরা । তঁহারা অমরকোষ লইয়া টানাটানি করিয়াছেন, ঘরের আসবাব-পত্র দেখেন নাই, বাড়ীর অমৃত-নিবারের খোজ লন নাই । চণ্ডীদাসের সময়-ভাব ও ভাষা বৌদ্ধাধিকার হইতে নিৰ্ম্মক্ত হইয়া-বৈষ্ণবের অধ্যাত্ম-লোকে প্ৰবেশ করিয়াছিল, কিন্তু এই সব পল্লীগাথায় বৌদ্ধাধিকারের বিলুপ্ত সমৃদ্ধির ধ্বংসাবশেষ টের পাওয়া যায় ; চণ্ডীদাসের লেখায় বৌদ্ধত্যাগ ও করুণার ভাব অপেক্ষা সহজিয়াদের তান্ত্রিকতা ও বৈষ্ণব ভাবপ্রবণতা বেশী । সুতরাং আমার মনে হয়, তিলকবসন্ত-গীতিকা বৈষ্ণব-প্রভাবের আরও পূর্ববৰ্ত্তী যুগের নিদর্শন । এই গল্পটি কতকটা কাশীদাসের মহাভারতের, শ্ৰীবৎস ও চিন্তার উপাখ্যানের মত। আমার পূর্বে ধারণা ছিল যে পল্লীকবি কাশীদাস হইতে র্তাহার গল্পের বিষয়-বস্তু আহরণ করিয়াছেন । শ্ৰীবৎস-চিন্তার আখ্যায়িকা কাশীদাস কোন পুরাণ হইতে সংগ্ৰহ করিয়াছেন, স্বৰ্গীয় রামগতি ন্যায়রত্ন মহাশয় তাহা খুজিতে যাইয়া সংস্কৃত পুথিশালাগুলি আলোড়ন করিয়াছিলেন, কিন্তু কোন সন্ধান পান নাই। মোট কথা, এই গল্প সংস্কৃত কোন পুরাণের ধার ধারে না। কেতকী ও মল্লিকা ফুলের মত এই শ্ৰীবৎস ও চিন্তার গল্প এদেশের পল্লী-মৃত্তিক-জাত । ইহার প্রথম হইতে শেষ পৰ্য্যন্ত বঙ্গের মাটির গন্ধ বহন করে। কাশীদাস এই পল্লী-সম্পদের অংশ-বিশেষ আহরণ করিয়াছেন, পল্লী-কবি তঁহার নিকট ঋণী নহেন, বরং উল্টা ; তিনিই পল্লী-বৃদ্ধগণের মুখে এই গল্প শুনিয়া স্বীয় মহাভারতে সন্নিবিষ্ট করিয়াছেন। পাঠক এই দুই কবির কথিত আখ্যান বিশ্লেষণ করিয়া দেখিলে বুঝিতে পরিবেন, পল্লীগাথাটি অনেকাংশে প্ৰাচীনতর। কাশীদাস কৰ্ম্ম-পুরুষের স্থলে লক্ষ্মী ও শনির প্রতিদ্বন্দিতা আমদানী করিয়াছেন, কুণ্ঠরোগ বরণ করিয়া লইবার জন্য সুলারাণী কৰ্ম্ম-পুরুষের নিকট বর প্রার্থনা করিয়াছেনসূৰ্য্যদেবের শরণ লন নাই। লেখার ভাব ও ভাষা স্পষ্টই প্ৰাচীনতর ও