পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবন-কথা Me/o এসিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গল শুধু সংস্কৃত পুথিরই খোজ করিতেছিলেন,-কিন্তু বাংলা পুথির দুই একখানির নাম হরপ্রসাদ শাস্ত্রী জানিলেও এপৰ্য্যন্ত তাহা উপেক্ষার বিষয়ই ছিল। পারিবারিক অশান্তি ও শোকে তাপে জীৰ্ণ দীনেশচন্দ্র তখন জীবনের প্রতি উপেক্ষাশীল ছিলেন, তিনি এইবার তাহার ব্ৰত ঠিক করিলেন। পুথির সন্ধানে তিনি আত্মহারা পাগলের ন্যায় রাত্ৰি দিন পল্লীতে পল্লীতে ঘুরিয়া বেড়াইতে লাগিলেন । ময়নামতীর পাদমূলে ক্ষুদ্র গ্রামগুলিতে তিনি কখনও কখনও ভুল সংবাদ পাইয়া রাত্রিকালে উপস্থিত হইয়াছেন। বহু শ্রম ও কষ্ট স্বীকার। এইভাবে ব্যর্থ হইয়া গিয়াছে। একদিন কালিকান্ত বৰ্ম্মন ও দীনেশ বাবু রাত্রি বারটার সময় অন্ধকারাচ্ছন্ন পার্বত্য পথে যাইতেছিলেন। সে কি সৃষ্টিসংহারক ঝড় বৃষ্টি ! সেই বিরল-বসতি পাহাড়ের দেশ ভীষণ অজগর সৰ্প ও ব্যাস্ত্ৰ সংকুল, কালিকান্ত বাবুর মুখ শুকাইয়া গেল, কিন্তু দীনেশবাবু তখন অসমসাহসী তরুণ যুবক, তিনি ভাবিলেন, এভাবে মৃত্যু হইলেই মঙ্গল, তাহার পিতামাতার কথা মনে পড়িয়া দুই চক্ষু অশ্রুতে ভরিয়া গেল। “তোমরা কি তোমাদের প্ৰিয় পুত্ৰকে তোমাদের কাছে লইয়া যাইবে না ?” এই ভাবের চিন্তায় বিভোর হইয়া বর্ষার নিদারুণ জলপ্রপাতের মধ্য দিয়া চলিতে লাগিলেন। এইরূপ দৃঢ় সঙ্কল্পিত হইয়া প্ৰতি পদে মৃত্যুকে বরণ করিতে সমুৎসুক হইয়া তিনি অকুল সমুদ্রে পতিত একখানি ডিঙ্গা নৌকার ন্যায় ডুবিতে ডুবিতে বঁচিয়া গেলেন। কখন কখনও তিলক ফোটা কাটিয়া বৈষ্ণবের ছদ্মবেশে তিনি তাহাদের সঙ্গে মিশিয়া পদ সংগ্ৰহ করিয়াছেন। উত্তরকালে এসিয়াটিক সোসাইটির নিযুক্ত ভট্টপল্পী বাসী বিনোদবিহারী কাব্যতীর্থ তাহার সহচর হইয়াছিলেন। উভয়ে সমবয়স্ক, র্তাহারা শ্যামল শস্যক্ষেত্র, হস্তী দলিত পদ্মবন-সন্ধুল প্ৰাচীন দীঘি, গোলার ধান ভৰ্ত্তি করিতে নিযুক্ত পল্লীযুবক যুবতী, রন্ধনশীল রমণীর আলুলায়িত কেশ ও ধোঁয়ায় অশ্রুপূর্ণ চক্ষু, অপোগণ্ড শিশুর কান্না, ও বৃদ্ধের কেঁচা ধরিয়া বালকের আবদার, বৃহৎ বৃষের সাহায্যে চাষার ক্ষেত্র চাষ ইত্যাদি পল্লীগ্রামের শত শত দৃশ্য দেখিতে দেখিতে যাইতেন ; কোথাও