পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SSbro বাংলার পুরনারী মলুয়া কাব্য পড়িয়া মনে হয়, চন্দ্রাবতীর আদর্শ ছিল বাল্মিকীর সীতা । চন্দ্রাবতী সংস্কৃতে সুপণ্ডিত ছিলেন, কিন্তু তিনি বাল্মিকীর কাব্যের আক্ষরিক অনুবাদ করেন নাই। মলুয়া কাব্যের অনেক স্থলেই সীতাকে মনে পড়িবে। মলুয়া কাজির অশিষ্ট প্ৰস্তাবের যেরূপ তেজগৰ্ভ উত্তর দিয়াছিলেন, তাহা সীতার প্রত্যুত্তরের মত, অথচ তিনি বাল্মিকীকে নকল করেন নাই। সীতা চরিত্রটি তিনি প্ৰাণের সমস্ত করুণ বেদনা ও দরদ দিয়া বুঝিয়াছিলেন, মলুয়া সীতার প্রতিবিম্ব নহে, দ্বিতীয় সীতা—সেইরূপই মৌলিক ও স্বাভাবিক —কিন্তু তাহা নকল নহে। সমস্ত বাঙ্গালী হিন্দু যাহার চরিত্ৰ-গৌরব শত শত বৎসর যাবৎ হৃদয়ে আয়ত্ব করিয়াছিল, সেই সংস্কার-পুষ্ট ধারণা হইতে এই দ্বিতীয় সীতার আবির্ভাব । ইহাতে বালিকীর সীতার পবিত্ৰতা ও তেজ আছে, এবং বাঙ্গালার আবহাওয়ার কোমলতা ও সুকুমারত্ব उांgछ । হিন্দুনারীর তেজ-বীর রমণীর যোগ্য। যে মলুয়া—কাজিকে গৰ্বিবত ভাবে অসম সাহসিকতার সহিত সম্পদ্বিতভাষায় অগ্রাহ্যু করিয়াছিল-সে মলুয়া সামাজিক অত্যাচারে একবারে নিস্তেজ-নিস্তরঙ্গ হইয়া গিয়াছিল, যাহার ক্ষুরধার বুদ্ধিতে শত ষড়যন্ত্র বিফল হইয়াছিল, সে যখন সামাজিক অনুশাসনে পরিত্যক্ত হইল, তখন একটি কথা বলিতে সাহসী হইল না। রামায়ণের সীতা সামাজিক নিগ্রহে পরীক্ষা দিয়া সতীত্ব প্ৰমাণ করিতে চাহিলেন না, ঘৃণায় পাতাল পুরীতে আশ্রয় লইলেন। কিন্তু মলুয়া সমাজের নিতান্ত অন্যায় অনুশাসন মানিয়া লইলেন, একটিবার প্রতিবাদ করিলেন নানা করিবার কারণ,-যে প্ৰতিবাদ স্বামীর করা কীৰ্ত্তব্য ছিল, তাহা তিনি করেন নাই-বরং দ্বিতীয়বার দারপরিগ্ৰহ করিয়া সামাজিক শ্বাসনের অনুমোদন করিয়াছিলেন। এই অপমান ও দুঃখে মলুয়ার সমস্ত প্ৰতিবাদ কণ্ঠে আসিয়া ফিরিয়া গেল। তিনি কি বলিবেন, যিনি বলিবার তিনি স্ত্রীর সমস্ত অপমান গলাধঃকরণ করিলেন। মলুয়ার সমস্ত তেজস্বিতা ও দর্প ভাঙ্গিয়া চুরিয়া গেল। তিনি জানিতেন, দুঃখ সহিবার জন্যই তঁহার জন্ম হইয়াছিল, সুতরাং তিনি দুঃখকে ভয় করেন নাই। শেষে জলে ডুবিয়া মরিলেন, এই কাজ