পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মঙ্গুয়া S> তিনি কষ্ট অসহিষ্ণু হইয়া করেন নাই। স্বামীর প্রতি অনুরাগই র্তাহার সমস্ত কাৰ্য্যের অনুপ্ৰাণনা দিয়াছিল। নিজের সমস্ত অলঙ্কার পত্র বেচিয়া খাইয়াও তিনি স্বামীর ভিটা আঁকড়াইয়া ছিলেন। তারপরে যখন সমাজ কর্তৃক লাঞ্ছিত হন, তখনও স্বামীর গৃহে কিছু ধরিতে ছুইতে না পারিয়া শুধু তাহার মুখখানি দেখিবার লোভে সেই ভিটায় বাহিরের পরিচারিকা হইয়াছিলেন,-ইহার মধ্যে কতবার পিতৃগৃহে তঁহাকে লইয়া যাইবার জন্য ভ্রাতারা আসিল, কিন্তু তিনি তাহদের সমস্ত স্নিগ্ধ আমন্ত্রণ অগ্ৰাহা করিয়া চুড়ান্ত কষ্টকে বরণ করিয়া লইলেন। স্বামী প্ৰাণতার এই দৃষ্টান্ত সাহিত্যে বিরল। বিনোদ দ্বিতীয় দারপরিগ্রহের পর তিনি সতীনকে যে আদর দেখাইয়াছিলেন-তাহ নিতান্ত অকৃত্ৰিম । যখন তাহার নিকট চির-বিদায় লইলেন, তখন তাহাকে বলিলেন, “তুমি আমার জন্য দুঃখ করিও না, আমাকে মনে পড়িয়া দুঃখ হইলে স্বামীর মুখ দেখিয়া ভুলিও।” তিনি অকপটে সতীনকে ভালবাসিয়াছিলেন এবং নিজে সরলভাবে বিশ্বাস করিয়াছিলেন, সতীনও তঁাহাকে ভালবাসে। তঁহার অকপট ভালবাসা এই বিশ্বাসের সৃষ্টি করিয়াছিল এবং তিনি বুঝিয়াছিলেন সতীন তাহাকে সত্যই ভালবাসেন এবং তাঁহার মৃত্যুতে ব্যথিত হইবেন। সেই শেষদিনকার চরম দুদিনে যখন আকাশে মেঘ ও ঝঞা, নিমে সূত্যানদীর উত্তাল তরঙ্গ, তখন ভাঙ্গ মন-পাবনের ডিঙ্গায় এই অপরূপ রমণী ধীরে ধীরে জলে ডুবিতেছেন। যাহারা দেবী বিসর্জনের দৃশ্য দেখিয়াছেন, অস্তচূড়াবলম্বী শেষ রৌদ্রের রেখায় ঝলমল প্রতিমার মাথার ডুবন্ত মুকুট দেখিয়াছেন, তিনি এই মলুয়ার শেষ-দৃশ্যের কারুণ্য এবং ভীষণ মৃত্যুর এই সুন্দর পরিণাম উপলব্ধি করিতে পারিবেন। চন্দ্রাবতী নিজে চিরদুঃখিনী ছিলেন, তিনি নিজের দুঃখ দিয়া এই দুঃখিনী মলুয়াকে গড়িয়াছিলেন, তাই মলুয়া চরিত্র এত জীবন্ত হইয়াছে। এই গল্পটিতে যে “নজর মরিচার” কথা আছে, ইউরোপেও সেইরূপ প্ৰথা বিদ্যমান ছিল। মধ্য-যুগে প্ৰাদেশিক শাসনকৰ্ত্তারাও র্তাহাদের অধীনস্থ প্ৰজাদের নিকট হইতে বিবাহ উপলক্ষে এইরূপ কর আদায়