পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

औष॥ बँयू Sea গানটি যেভাবে আমরা পাইতেছি, তাহাতে মনে হয়, ইহা চণ্ডীদাসের কিছু পরবর্তী। কিন্তু খুব পরবর্তী নহে, তাহার প্রমাণ ভাষায়। ইহার মধ্যে যে সকল কথা ও কবিতার অংশ দৃষ্ট হয়—তাহা চতুৰ্দশ শতাব্দীর শেষভাগে বাঙ্গালা সাহিত্যে প্ৰচলিত ছিল। “যেই বৃক্ষের তলায় যাইব ছায়া পাইবার দায়। সেই বৃক্ষ না আগুনে বর্ষে অন্তর পুইরা যায়।” এই পদটি প্ৰায় এই ভাবেই চণ্ডীদাসের একটি পদে পাইয়াছি। তাহা তিনশত বৎসর পূর্বের লিগ্নিত পদাবলীর একটি পাণ্ডুলিপিতে। “আজি হৈতে তোমায় বঁধু ছাড়িয়া না দিব, নয়নের কাজল ক’রে নয়ানে থুইব।” ইত্যাদি পদও সেই চতুৰ্দশ পঞ্চদশ শতাব্দীর সন্ধিস্থলের পরিচিত সুর। “যোগিনী সাজিয়া চল কাননেতে যাই । চন্দন মাখিয়া কেশে বানাইবা জটা।” ইত্যাদি পদ চণ্ডীদাসের, “আমি যোগিনী সাজিব” প্ৰভৃতি পদের প্রতিধ্বনির মত শুনায় ৷ এইরূপ অনেক শব্দ ও পদের অংশ আছে—তাহা চৈতন্য-পূর্ব সাহিত্যের আগমনী গানের মত মনে হয়। যে সর্বস্ব-দেওয়া প্ৰেম এই গল্পের মূল মন্ত্র, তাহা আসন্ন চৈতন্যদেবের পদের মঞ্জীর শব্দের ন্যায় কাণে বাজে। প্ৰেম চাহিলে যে কষ্টকে বরণ করিতে হয়-তােহা বারংবার বলা হইয়াছে। সুখ খুজিলে যে দুঃখকে বরণ করা অপরিহাৰ্য্য তাহা এই কবি চণ্ডীদাসের মতই জোর করিয়া বলিয়াছেন । তথাপি মনে হয়, চণ্ডীদাসের গানে যে আধ্যাত্মিকতা আছে-স্বর্গের সন্ধান আছে-আঁধা বন্ধুর কবি তাহা দিতে পারেন নাই-চণ্ডীদাস প্ৰেমকেই বড় করিয়া দেখাইয়াছেন, এই কবি ত্যাগকে বড় করিয়া দেখাইয়াছেন। চণ্ডীদাস বুঝিয়াছিলেন, দুঃখের আঁধার কাটিয়া গেলে প্ৰেম-সিদ্ধির সৌর-লোক দেখা দিবে। আধা বঁধুর কবি দেখাইয়াছেন ত্যাগের কষ্টই মানুষের লক্ষ্য-তাহার পরে কিছু নাই। বৈষ্ণব কবি বলিয়াছেন, “আঁধার পেরিলে আলো” আঁধার রাজ্য পার হইলে আলো পাইবে, কিন্তু আঁধা বঁধুর কবি কোন আলোর সন্ধান নাই ; চণ্ডীদাস বলিয়াছেন “ব্ৰহ্মাণ্ড ব্যাপিয়া আছয়ে যে জন, কেহ না দেখয় তারে । প্রেমের আরতি যে জন জানিয়ে, সেই সে চিনিতে পারে।”